ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

গোহালা নদীর আড়াই কিমি ইজারা, মাছ ধরতে দিতে হবে টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৪৯, অক্টোবর ৩, ২০২৫
গোহালা নদীর আড়াই কিমি ইজারা, মাছ ধরতে দিতে হবে টাকা! গোহালা নদী

সিরাজগঞ্জ: চলনবিল এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি ছোট নদী গোহালা। নদীটির একটি শাখা থেকে শতাধিক মৎস্যজীবী মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

এবার গোহালার সেই শাখানদীর আড়াই কিলোমিটার অংশ ইজারা দেওয়া হলো।

স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় নদীটি ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া বাজারে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার উধুনিয়া বাজার জামে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে নদী ইজারার দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দরপত্রে ৩৫ হাজার টাকা থেকে দর উঠতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত উধুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মোল্লা ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় নদীটি ইজারা নেন।

মসজিদ কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, বাংলা আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ইজারা দেওয়া আড়াই কিলোমিটার অংশে ইজারাদার ছাড়া কেউ মাছ ধরতে পারবেন না। ফলে স্থানীয় জেলেদের জীবিকার তাগিদে ইজারাদারের কাছে টাকা দিয়ে মাছ ধরতে হবে।

উধুনিয়া গ্রামের জেলে ইসমাইল হোসেন, আব্দুল মান্নান ফকিরসহ একাধিক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জানান, তারা কেউ কেউ ৪০ বছর ধরে এ নদীতে বিনা খরচে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু এ বছর ইজারাদারকে ১০-১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েই মাছ ধরতে হবে। এত টাকা দিয়ে মাছ ধরা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাবে। এলাকায় শতাধিক পেশাদার ও অপেশাদার মৎস্যজীবী রয়েছেন, যাদের সবার অবস্থাই একই রকম।

স্থানীয় দোকানদার সোহেল রানা বলেন, মসজিদ কমিটি ইজারার জন্য মাইকিং করেছিল। পরে উধুনিয়া বাজারে সবার উপস্থিতিতে দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়। তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ইজারাদার ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, সর্বোচ্চ দর ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় আমি আড়াই কিলোমিটার গোহালা নদীর ইজারা পেয়েছি। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতেই এটি সম্পন্ন হয়েছে।

উধুনিয়া জামে মসজিদের সহ-সভাপতি হাজি আব্দুল হামিদ জানান, মসজিদ উন্নয়নের তহবিল সংগ্রহের জন্য এ ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারা নেওয়ার পর অন্য কেউ মাছ ধরতে পারবে না।

তবে উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, নদীতে মাছ ধরার জন্য কোনো মসজিদ কমিটির ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা রিমা জানান, সরকারি জলমহাল নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে ইজারা দেওয়া হয়। কেউ চাইলেই নদী ইজারা দিতে পারে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, নদী সরকারি সম্পদ। কোনো ব্যক্তি বা কমিটি নদী ইজারা দিতে পারে না। যদি কেউ দিয়ে থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, নদী ইজারা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।