দেড় মাস আগে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। মাসিক ৬ হাজার টাকা চুক্তিতে তিন তলাবিশিষ্ট বাসার নিচতলা ভাড়া নেন তিনি।
তবে তার সঙ্গে দেখা বা কথাবার্তা হতো না বলে জানান ওই বাসার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়ারা। ওই বাসাটিতে নিচতলায় সুব্রত বাইন এবং ওপরের দুইটি তলায় শিক্ষার্থীরা ম্যাচ হিসেবে থাকতেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তারের পরে ওই শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে এখানে সুব্রত বাইন নামে শীর্ষ সন্ত্রাসী থাকতেন। যার নামে ইন্টাপোলে রেড নোটিশ জারি রয়েছে।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং ওই বাসার বাসিন্দা শাহীন আলম জানান, প্রতিদিনের মতো আমরা সবাই ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৫টার সময় আমার রুমের দরজায় শব্দ হয়। শব্দ শুনে আমি দরজা খোলা মাত্রই দেখতে পায় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য বন্দুক তাক করে আমাকে বলে হ্যান্ডস আপ। তখন আমি হাত উঁচু করি এবং বসে পড়ি। পরে আমরা যারা শিক্ষার্থীরা ছিলাম সবাইকে এক রুমে নিরাপদে নিয়ে আসেন তারা। তারা প্রথমে ভাবে আমরা ওই গ্যাং এর সদস্য পরে তারা আমাদের বই খাতা এবং কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হন আমরা শিক্ষার্থী। তখন একজন সেনা সদস্য জিজ্ঞাসা করেন যে এখানে আর কেউ থাকে কিনা? তখন আমরা বলি নিচের তলায় একজনকে দেড় মাস আগে ভাড়া দিয়েছিলাম। পরে তারা নিচে নেমে দরজা ভেঙে ভেতর থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এর ৪০ মিনিট পরে যখন আমাদের ছেড়ে দেয় তখন আমরা বারান্দায় এসে দেখি, দুইজনের হাত পেছনে বাধা এবং একটি মাইক্রোবাসে করে দুজনকে নিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, যখন আমাদের সবাইকে রুমে একটা সেভ জায়গায় রেখেছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তখন তাদের কাছ থেকে জানতে পারি - এখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন অবস্থান করছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্যই অভিযান।
কীভাবে বাসা ভাড়া নিয়েছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহীন জানান, আমরা এই পুরো বাসাটা ১৮জন শিক্ষার্থী মিলে মাসিক ১৭ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে থাকতাম। আমরা সবাই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায় থাকতাম। নিচের তলাটা ফাঁকা পড়ে ছিল। দেড় মাস আগে আমাদের বাসার পেছনের ভাড়াটে হেলাল উদ্দীন আসেন আমাদের ম্যাচের নিচের তলা ভাড়া নেওয়ার জন্য। তিনি ভাড়া নেওয়ার সময় জানান, তিনি অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করেন। সেটির জন্য কাপড় রাখবেন এবং সেইসঙ্গে তার বাসায় অনেক গ্রেস্ট আসেন মাঝে মাঝে তারা এখানে থাকবেন। এই বলে আমাদের কাছে মাসিক ৬ হাজার টাকা চুক্তিতে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার ৫-৬দিন পরেই তিনি এই বাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন এবং সেটি তার নিজের বাসা থেকে কন্ট্রোল করতেন।
নিচের তলায় যারা বসবাস করতেন তাদের সঙ্গে খুব একটা দেখা হতো না। তবে কয়েকদিন ধরে মাঝে মধ্যে রাতে একটা গাড়ি আসতো। একদিন শুধু একটি মেয়ে এবং একজন পুরুষ মানুষকে সেখানে কাপড় মেলতে দেখেন বলে জানান শাহীন নামের ওই শিক্ষার্থী।
ওই ছাত্রাবাসে থাকা ইমন নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের সব ছাত্রদের একত্রে রেখেছিল। পরে নিচতলা থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। যাদের আটক করে নিয়ে গেছে তাদের আমরা চিনি না তবে দেড় মাস আগে কাপড়ের ব্যবসা করে বলে ভাড়া নিয়েছিল। কখনো তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি।
বাসা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী আটকের পরে কিছুটা আতঙ্কে আছেন বলে জানান ওই বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে সেখানে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়কের ৫২ নম্বর বাসাটির মালিকের নাম মীর মহিউদ্দিন। তবে বাসার মালিক মারা যাওয়ার পরে তার মেয়ে বাসাটিকে শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল ইসলাম বলেন, ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখতে পাই। এ সময় মীর মহি উদ্দিনের বাড়ি ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়েছিল। জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, অভিযান চলছে। এরপর ওই বাড়ি থেকে দুজনকে নিয়ে যায়।
পার্শ্ববর্তী বাসার বাসিন্দা রোকনুজ্জামান বলেন, সকালে শব্দ শুনে দেখি আর্মিরা বাড়িটা ঘিরে রেখেছে। পরে দরজা ভাঙার শব্দ শুনি। জানালা দিয়ে দেখি বাড়ি থেকে দুজনকে সেনাবাহিনীরা আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারি যে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল। এলাকায় এমন সন্ত্রাসী ছিল এখন তো আতঙ্ক বিরাজ করছে আমাদের মাঝে।
তবে যিনি বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন সেই বাড়ির কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় তারা পালিয়েছে।
** দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার সুব্রত বাইন-মোল্লা মাসুদ
আরএ