পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে দুস্থ নারীদের জন্য সরকারের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)’ কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা নেওয়ার অভিযোগে আটক ১১ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে আটজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি তিনজন নারী সদস্যকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আদম সুফি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিকেলে পঞ্চগড় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ আকতার জুলিয়েট এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, সোমবার (২৬ মে) রাতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে তাদের আটক করে থানায় নেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
এর আগে অভিযোগ ওঠে, ওই ১১ ইউপি সদস্য সরকারি উপকারভোগী ২৫৮টি পরিবারের মাঝে ভিডব্লিউবির চাল বিতরণের জন্য প্রত্যেক কার্ডের বিপরীতে ৫০০ টাকা করে অবৈধভাবে চাঁদা নেন। সোমবার বিকেলে এ অভিযোগে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন তারা। ঘটনার পর থেকে উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে সেনাবাহিনীর বোদা উপজেলা সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোট এক লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা।
১১ ইউপি সদস্য হলেন- বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম, আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য শেফালী রাণী, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।
সোমবার সকাল থেকে বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের দুস্থ নারীদের সাহায্যার্থে সরকারিভাবে ভিডাব্লিউবি কার্ডের আওতায় ২৫৮টি পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসের মোট ১৫০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এসময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০-৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ওই ইউপি সদস্যরা। পরে সুবিধাভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ১১ ইউপি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের মধ্যে তিন নারী সদস্যকে জামিন দিয়ে বাকি আটজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আদম সুফি গণমাধ্যকর্মীদের বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১১ জনের মধ্যে তিনজন নারী ইউপি সদস্যকে জামিন দিয়ে বাকিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এসআই