ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সচিবের সঙ্গে সভার পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের দাম কমানোর ঘোষণা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
সচিবের সঙ্গে সভার পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের দাম কমানোর ঘোষণা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের মতবিনিময় সভার একদিন পর চালের দাম পূর্বের মূল্যে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মিল মালিক ও ধান চাল সমিতি। শুধু তাই নয় প্রতিটি মিলের গেটে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে চালের নতুন নির্ধারিত বিক্রয় মূল্য।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরাতন বাজারের চেম্বার ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সমিতির পক্ষে সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক অংশীজনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।  

এ সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফ করে বাজার দর স্বাভাবিক করার করার ঘোষণা দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।  

এ সময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ, অটোরাইস মিল, হাসকিং মিল, সিদ্ধ চাল মিল কল মালিক, পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী, চেম্বার প্রতিনিধিসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

একদিন পর শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি চালের মূল্য কেজি প্রতি ৬২ টাকা স্থলে বেড়ে ৬৪ টাকা হয়ে যাওয়ার পর আবারও বিক্রয় মূল্য ৬২ টাকা করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সম্মেলনে সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে উন্নতমানের চাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হলেও সম্প্রতি ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ধানের উৎপাদন এলাকা না হওয়ায় নওগাঁসহ অন্যান্য জায়গা থেকে ধান কিনতে গিয়ে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তারপরও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে জেলা সমিতি বিনা লাভে বা প্রয়োজনে লোকসান করে চালের দাম আবারও আগের দামে ফিরিয়ে এনেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো সিন্ডিকেট আছে কিনা এবং ভরা মৌসুমে কেন চালের দাম বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যে কোনো দুর্যোগ মুহূর্তে আমরা সরকারের পাশে থেকে কাজ করি বিশেষ করে করোনাকালে আমরা সরকারকে যথা সময়ে চাল সরবরাহ এবং সমিতির পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চাল দিয়ে জেলার গরীব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।

ব্যবসায়ীদের কষ্ট হলেও যথাসময়ে সব মৌসুমে সরকারের গুদামে চাল সরবরাহ করা হয়। তাই সিন্ডিকেট করে তাদের সমিতি কখনোই চালের মূল্য বাড়াইনি। উল্টো মিল থেকে কম দামে চাল কিনে কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করছে বলে মন্তব্য করেন।

সিন্ডিকেটে যুক্ত জেলার কয়েকটি মিলের নাম আসা প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বাকিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিল সমিতিভুক্ত মিল থেকে চাল না পেয়ে চালের যে সংকটের কথা গণমাধ্যমকে দিচ্ছে বা সিন্ডিকেটের কথা বলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য তিনি জেলার সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।  

তবে সরকারের কোনো চাপের কারণে দাম কমানোর বিষয়টি ঘটা করে জানানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।

সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত মিনিকেট/জিরাশাইল, ইরি ২৮, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে চাল সরবরাহ করা হলেও সম্প্রতি ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজার কিছু অস্থির হয়ে পড়ে। তারপরও প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করে ইতোমধ্যে চালের বাজার সহনীয় রাখতে সুলভ মূল্যে চাল বিক্রির বাজার দর অর্থাৎ চালের মূল্য নির্ধারণ করে প্রত্যেকটি মিলে ব্যানার ঝুলানো হয়েছে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নবাব গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আকবর হোসেন, মোজাম্মেল হক অটো রাইস মিলের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ হারুন, এরফান গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম, ফারুক অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, আতিক অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন অটোরাইস মিল, হাসকিং মিল ও সংশ্লিষ্টরা।   

এদিকে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে গড়ে চার টাকা কমেছে। এর আগে গত সপ্তাহে চালের দাম বেড়ে চিকন চাল ৭৫ টাকা আর মোটা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৪ টাকায়। বর্তমানে জেলা শহরের পুরাতন বাজার তোহাবাজারে কেজি প্রতি মোটা চাল ৪৮ টাকা, আঠাশ ও এ ধরনের চিকন চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের বাজারের অস্থিরতা নিয়ে বাংলানিউজ২৪. কম, কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে তোলপাড় শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।