বাগেরহাট: ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় শুক্রবার (০৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাটের কেবি বাজারে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে জেলেরা ইলিশ কম পাওয়ায়, দাম অনেক বেশি।
এদিন সন্ধ্যায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখল ছিল কেবি বাজার। ট্রলার থেকে নামানো ইলিশ উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতিতে বিক্রির পাশাপাশি কিছু ক্রেতা সরাসরি খুচরোও বিক্রি করছিলেন। এই ক্রয়-বিক্রয় চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত, ৫শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ টাকা কেজি দরে, ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে। এর থেকে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
ইলিশ ছাড়াও এই বাজারে তুলার ডাটি, রুপচাঁদা, ঢেলাচ্যালা, কঙ্কোন, চিতল, লইট্টা, জাবাসহ নানা ধরণের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে। সেসবেরও দাম তুলনামূলক বেশি।
যার ফলে ভোক্তারা অনেকটা ক্ষুব্ধ। নাগালের বাইরে দাম থাকায় অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে।
ইলিশ কিনতে আসা তানজিম শেখ বলেন, বাচ্চা দুটোর জন্য ইলিশ কিনতে আসছিলাম। কিন্তু ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়ে।
নওরেশুজ্জামান লালন নামের এক ক্রেতা বলেন, ৩ হাজার টাকা এক কেজি ওজনের ইলিশ ভাই। এটা খুবই আশ্চর্য্যজনক। এত দাম দিয়ে কে মাছ কিনবে। এছাড়া ছোট ইলিশের দামও আমাদের নাগালের বাইরে।
মাছ কিনতে আসা মরিয়ম বেগম নামের এক নারী বলেন, শেষ সময় ভাবছি মাছের দাম কম হবে, তাই আসছিলাম। কিন্তু দাম এত বেশি। বাচ্চারা আছে তাই ৮শ টাকা করে ছোট এক কেজি ইলিশ মাছ কিনেছি।
দাম বেশির কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলেরা মাছ কম পেয়েছে। আর ব্যয় অনেক বেশি হয়েছে। তাই দাম বেশি।
কেবি বাজার মৎস্য আড়ৎদ্বার সমিতির সভাপতি শেখ আবেদ আলী বলেন, এবার তুলনামূলক মাছ অনেক কম এসেছে। অনেক ট্রলার মালিকের লোকসান হবে। আসলে আমদানি কম থাকলে দাম বেশি হবে এটা স্বাভাবিক।
এদিকে জেলেরা বলছেন, এখনই মাছ ধরার সময়। আরও দশ দিন মাছ ধরতে পারলে ভাল মাছ পাওয়া যেত।
ইব্রাহিম হাজি নামের এক জেলে বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর সাগরে গেছি। তেমন মাছ পাইনি। অবরোধ তাই চলে আসছি। এই কয়দিন আগে একবার অবরোধ গেল এখন আবার অবরোধ। খরচের টাকাই ওঠে না। কি করব বলেন?
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। ইতোমধ্যে জেলে ও স্থানীয়দের সচেতন করতে, সভা, সেমিনার ও মাইকিং করা হয়েছে । এছাড়া নিষেধাজ্ঞের সময়ে, যাতে কেউ মাছ আহরণ করতে না পারে এজন্য কোস্টগার্ড, বন বিভাগ, র্যাব, নৌ পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তর নদী সমুদ্র ও নদী মোহনায় টহল জোরদার করবে।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়, সমুদ্র, সমুদ্রের মোহনা, নদী ও নদীর মোহনায় মাছ আহরন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। এর পাশাপাশি ইলিশ সংরক্ষণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও পরিবহন সম্পন্ন বন্ধ থাকবে। যদি কেউ এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজ কুমার রাজ।
তিনি বলেন, এটাই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়টা কাজে লাগাতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আমরা সর্বোচ্চা চেষ্টা কর।
এমআরএম