ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ সাড়ে ৩ কোটি টাকায় ইজারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১১, অক্টোবর ৭, ২০২৫
পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ সাড়ে ৩ কোটি টাকায় ইজারা

সিলেট: দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এবার বেসরকারিভাবে ছেড়ে দিয়েছে প্রশাসন। আগামী ছয় মাসের জন্য পর্যটনকেন্দ্রটি তিন কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (০৬ অক্টোবর) রাতে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিন মিয়া।

তিনি বলেন, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে পর্যটনকেন্দ্রটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য সাদাপাথর ইজারা দেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান করা হলে ২৭টি সিডিউল বিক্রি হয়। এরমধ্যে সিডিউল দাখিল করেছেন সাত জন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার লিলু মিয়া ইজারা পেয়েছেন। তিনি তিন কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকার দরপত্র দিয়েছেন।

যদিও সরকার নির্ধারিত মূল্য এক কোটি ৯০ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৩ টাকা ছিল বলে জানা গেছে। এতোদিন উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় তহসিলদারের মাধ্যমে খাস কালেকশন করিয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর ইজারাদারদের পর্যটনকেন্দ্রটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইজারা বহাল থাকবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ দরদাতা লিলু মিয়া সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভোলাগঞ্জ এলাকায় পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার একটি ক্রাশার মিলও রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সীমান্তের ১০ নম্বর এলাকায় পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা সাদা পাথর এক সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হয়ে ধরা দেয়। সাদা পাথর মাড়িয়ে ধলাই নদীতে এসে নামে স্বচ্ছ জল। এই জলে গাঁ এলিয়ে স্বর্গের সুখ সুধা নেন পর্যটকরা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে এবং বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্টে সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকায় প্রশাসন লুণ্ঠিত পাথর ফেরানোর উদ্যোগ নেয়।

গত ১৩ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পরিদর্শনে যান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাৎ-এর নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের একটি দল। অনুসন্ধান শেষে ১৬ আগস্ট প্রাথমিক প্রতিবেদন দুদক সদরদপ্তরে জমা দেয় জেলা কার্যালয়। প্রতিবেদনে পাথর লুটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা মিলিয়ে ৫৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানায় দুদক। লুটপাটের জন্য প্রশাসনকেও দায়ী করা হয়।

গত ১৮ আগস্ট সাদাপাথর লুটকাণ্ডে ওএসডি হন সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। একই দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়। বদলি হন সমালোচিত কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদকও। এ ছাড়া ২৫ আগস্ট সিলেটে পুলিশের ২২ সদস্যকে বদলি করা হয়।
প্রশাসনের তথ্যমতে, সাদাপাথর থেকে অন্তত ৮০ শতাংশ পাথর লুট হয়েছিল। এরপর দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে তোলপাড় হয়। প্রতিবেদনে পাথর লুটে মহানগর বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, মহানগর জামায়াতের আমির ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, এনসিপির জেলা ও মহানগর সমন্বয়কসহ ৪২ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতারও নাম ওঠে আসে।

এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবিসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পাথর লুটের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে সাম্প্রতিক পাথর লুট ও অবৈধ উত্তোলনের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় ইজারা প্রক্রিয়া। এরপর প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পুনরায় নিলামের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন।

এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।