ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

সান্ধ্যকালীন সাউন্ড-লাইট শো নিয়ে গেলো গোলকোন্ডা যুগে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৯
সান্ধ্যকালীন সাউন্ড-লাইট শো নিয়ে গেলো গোলকোন্ডা যুগে গোলকোন্ডা কেল্লায় সাউন্ড-লাইট শো। ছবি: বাংলানিউজ

গোলকোন্ডা কেল্লা (হায়দ্রাবাদ) ঘুরে: কেল্লার একেবারে ওপরে সালতানাতের দরবার হলকে সামনে রেখে গোধূলি লগ্নে কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে রইলেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়ার শতজনসহ দর্শনার্থীরা। আকাশের লালিমার আভা কেটে খানিকবাদেই নেমে এলো অন্ধকার। প্রাথমিক ব্রিফিংয়ে পর বেজে উঠলো বিখ্যাত গজলশিল্পী জগজিৎ সিংয়ের দরাজ কণ্ঠ, ‘এক ‍গুলশান থা জলওয়ানুমা...’।

এই গানে শুরু হয় গোলকোন্ডা ফোর্ট বা কেল্লার ওপর ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের ১৯৯২ সালে নির্মিত ‘সন এত লুমিয়েরে’ বা ‘সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো’। অমিতাভ বচ্চনের ভারী গলায় একের পর এক আসতে থাকে বর্ণনা।

ফাঁকে পরিপূরক হিসেবে শোনা যায় কবিতা কৃষ্ণমূর্তিসহ আরও কিছু শিল্পীর গলা।
 
গোলকোন্ডা, হায়দ্রাবাদ শহরের পশ্চিমাঞ্চলের একটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এমন কেল্লা, যেখানে থেকে মধ্যযুগে যাদব, কাকাতিয়া ও কুতুবশাহী সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো। ১১৪৩ সালে কাকাতিয়া আমলে নির্মিত হওয়ার সময় এটি পরিচিত ছিল ‘মনকল’ নামে। পরে এটি দখল করে নেয় বাহমানি সালতানাত (বাহমানি সাম্রাজ্য, যা মধ্যযুগে ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাজ্য ছিল)। বাহামানি সালতানাত দুর্বল হয়ে পড়লে সেই সময় সালতানাতের গভর্নর পদে থাকা সুলতান কুলি কুতুব শাহ গোলকোন্ডা স্বাধীন ঘোষণা করেন এবং এটিকে কুতুব শাহী সাম্রাজ্যের প্রধান রাজধানী করেন।
 
কুতুবশাহী আমলের গোলকোন্ডা কেল্লা।  ছবি: বাংলানিউজযুদ্ধ প্রতিরোধের উপযোগী করে বানানো সুরম্য প্রাচীরের ভেতরে কেল্লার নকশা ও ভেতরের নকশা অনুসারে কোথাও বড় গ্রানাইট পাথর কোথাও ছোট পাথর, আবার কোথাও উভয়ের মিশেল চোখে পড়ে। বাইরের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৩ বর্গকিলোমিটার এই কেল্লায় যেমন আছে রাজপ্রাসাদের প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু কক্ষ-ঘর, তেমনি আছে মসজিদ এবং পাহাড়চূড়ায় একটি প্যাভিলিয়ন। এই প্যাভিলিয়ন প্রায় ১৩০ মিটার উঁচু, যেখান থেকে পুরো হায়দ্রাবাদ শহর দেখা যায় ‘পাখির চোখে’। অনেক বিস্ময়ের মধ্যে বড় বিস্ময়, এই কেল্লায় গম্বুজের প্রবেশদ্বারের নির্দিষ্ট একটি স্থানে কেউ জোরে হাততালি দিলে তা স্পষ্টভাবে ওই শীর্ষ প্যাভিলিয়নে পর্যন্ত শোনা যায়, যা সেই পয়েন্ট থেকে প্রায় কিলোমিটারখানেক দূরে। এটা কেল্লার ওপরে থাকা সালতানাতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকর্তাদের সতর্ক বা বার্তা দেওয়ার জন্য কৌশল ছিল বলে মনে করা হয়।
 
এই কাহিনি-বর্ণনায় দর্শক-শ্রোতার সামনে উপস্থাপন করা হয়, কিভাবে দিল্লির শাসক আলাউদ্দিন খিলজির কাছ থেকে আগ্রাসনের হুমকি পাওয়ার পর কাকাতিয়ার শাসক প্রতাপরুদ্র ও তার কমান্ডার দুর্গকে শক্ত করে গড়ে তোলার ব্যাপারে আলাপ করেছিলেন। এরপর সাম্রাজ্য দখলচেষ্টা ও নস্যাতের কাহিনির ধারাবাহিকতায় এই শো চলে যায় একটি পারিবারিক ড্রামায়, যেখানে ভাগমতী নামে এক নর্তকীর প্রেমে পড়ে রাজ্যের দায়িত্বভার সামলানোর ক্ষেত্রে তৎকালীন শাসকের ছেলে মোহাম্মদ কুলির (যিনি পরে চতুর্থ রাজা হয়েছিলেন) উদাসীনতা পর্যন্ত উঠে আসে। তেলুগু ভাষার বেশ কিছু গানের সুরে সুরে প্রাসঙ্গিক নানা ভাষ্য জানিয়ে দেওয়ার ফাঁকে তুলে ধরা হয় দুর্গের অন্দরমহলের গল্প-গুজব আর হাসি-ঠাট্টাও।
 
কুতুবশাহী আমলের গোলকোন্ডা কেল্লা।  ছবি: বাংলানিউজহায়দ্রাবাদে কোহিনুরের খনি, কুচিপুরি নৃত্য, রামদাশের কারাবন্দিত্ব ও পরে মুক্তির বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি আবদুর রাজ্জাক লারির বিশ্বাস ও আবদুল্লাহ খান পান্নির বিশ্বাসঘাতকতার কথাও তুলে ধরা হয় কাহিনি-বর্ণনায়।
 
প্রত্যেকবারে ভাষ্য দেওয়ার সময় কেল্লার আলাদা আলাদা অংশে লাল-নীল-সবুজ প্রভৃতি বাতি জ্বালিয়ে নির্দেশকরা যেন দর্শনার্থীদের সেই কুতুবশাহী যুগে নিয়ে যাচ্ছিলেন বারবার।
 
ধারা বর্ণনা অনুযায়ী, যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও কুতুবশাহী সাম্রাজ্যের অষ্টম ও শেষ শাসক আবুল হাসান কুতুব শাহ ‘সকালে নাস্তা’ করার সময় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এই অবস্থায়ও আপনি নাস্তা করছেন জাহাপনা!’ জবাবে আবুল হাসান উত্তর দিয়েছিলেন, ‘কখন কী ঘটবে তা ওপরওয়ালা নির্ধারণ করে দেন বলে এ নিয়ে বাড়তি ভাবনার কিছু নেই। ’
 
প্রায় এক ঘণ্টার সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো’র শেষাংশেও জগজিৎ সিংয়ের গান বাজানো হয়। তবে প্রথমে যে সুরটা মনোযোগ নিয়েছিল শো’তে, শেষে গানের সুর যেন বিষাদ লেপ্টে দিলো ভাবনার ক্যানভাসে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এইচএ/
আরও পড়ুন
**
উত্তম-সুচিত্রা-শাহরুখ-ঐশ্বরিয়াদের সঙ্গে লাঞ্চ!

** থিয়েটারে ঢুকেই নায়িকা কানেতা, ‘ফিল্ম’ তৈরি ১৫ মিনিটে!
** উষ্ণ অভ্যর্থনা-বর্ণিল আয়োজনে শতযুবাকে আপন করলো জেএনটিইউ
** কেক কেটে জাহানারার জন্মদিন উদযাপন করলো শতযুবা
** নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে
** মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩৮৪৩ ভারতীয় সেনার স্মৃতিরমিনারে
** মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান
** ২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'
** ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
** মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
** ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ 
** ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
** ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad