পাথর রাজ্যের গডফাদার খ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা একাধিক হত্যা মামলার আসামি কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফুর নামে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবার মামলা দায়ের করেছেন সাংবাদিক নয়ন সরকার নিমু।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন নগরের পূর্ব পীরমহল্লা প্রভাতি ৬৫ বাসার বাসিন্দা সাংবাদিক নয়ন সরকার নিমু।
এর আগে তিনটি হত্যাসহ ১৯টি মামলা ছিল আলফুর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মামলা হলো ২০টি।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলফু। বৃহস্পতিবার আদালত তাকে ১ দিনের মঞ্জুর করেন।
এদিকে রিমান্ড শুনানির দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ হেফাজতে থাকা কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফু ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক নয়ন সরকার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে রেকর্ড করার তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক নয়ন সরকার নিমু মামলায় আলফু ছাড়াও তার ছেলে বায়েজীদ আহমদ (২৬) ও আলফু মিয়ার ভাইসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫ জনকে অভিযুক্ত করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার পাথর লুট মামলার আসামি আলফুর রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য ছিল।
এদিন সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সিলেট জজকোর্ট ভবনের নিচতলার প্রবেশদ্বারে সিঁড়ির সামনে ক্যামেরাপার্সন বিশাল দে বৃত্তকে সাথে সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন।
কোম্পানীগঞ্জ আমলি আদালতে রিমান্ড শুনানির আদেশ শোনার পর খবর সংগ্রহ করে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে যেতেই পুলিশ হেফাজতে থাকা আলফুর নির্দেশে তার ছেলে ২নং আসামি ও ৩নং আসামি আলফুর ভাইসহ তার বাহিনীর ৪/৫ জন ত্রাস সৃষ্টি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক হাতে থাকা ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি আইফোন মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আলফু ও তার ছেলে এবং সহযোগী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে। এরপর তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে আলফু চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর কোম্পানীগঞ্জে গুলি করে পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল আলী হত্যা, দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে দুটি হত্যাকাণ্ডসহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর পাথর ও বালু লুটে তার নাম ওঠে আসে। বিশেষ করে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে সাদাপাথর নজিরবিহীন লুটকাণ্ডের মামলারও অন্যতম হোতা তিনি।
এ ছাড়া পাথর লুটকাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে সিলেট থেকে ওএসডি হওয়া সাবেক জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে বালু মহাল ইজারা দেন। সেই ইজারার নেপথ্যে ছিলেন আলফু চেয়ারম্যান। তার ভায়রা ভাই আব্দুল্লাহকে ইজারাদার বানিয়ে বালু মহাল ইজারা নেন। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট ইজারাস্থল ছেড়ে ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন করায় সেতুটি হুমকির মুখে পড়ে। যে কারণে ফুঁসে ওঠেন স্থানীয় জনতা। এ নিয়ে সেতুর ওপর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। ওইসময় বালু মহাল ইজারার বিষয়টি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে যে, পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার শ্রমিক সাদা পাথর লুট করে পর্যটন এলাকাকে বিবর্ণ করে দেয়, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এনইউ/এএটি