নরসিংদী: নরসিংদীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলার ঘটনায় ফজলুল রশিদ ওরফে আদরসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশের ভাষ্যমতে, ফজলুল রশিদ ওরফে আদর নরসিংদী সিএনজি অটো রিকশাসহ নৌপথে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা উত্তোলন করে আসছিলেন।
এদিকে সড়কে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। শহর পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই সোহেল পারভেজ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নরসিংদী শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার মাহমুদুর রশিদের ছেলে ফজলুল রশিদ ওরফে আদর (৪০), শিবপুর দত্তের গাও ভিটি পাড়া গ্রামের শামসুল হক খন্দকারের ছেলে শফিকুল ইসলাম সুমন (৪৪), হাজীপুর বিরাজ খায়েরের ছেলে কুদরত হাসান রবিন (২৩), তার ভাই মো. রকিব খা (৩০), ব্রাহ্মন্দী এলাকার মো. হুমায়ন কবিরের ছেলে মো. সোহাগ মিয়া (৩৫), বৌয়াকুর এলাকার মো. শওকত মিয়ার ছেলে মো. তানভীর মিয়া (২২) ও বালিয়া এলাকার শামসুল আলমের ছেলে শান্ত মিয়া (২৩)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৪ অক্টোবর) নরসিংদীর অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার শামিম আনোয়ারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নিয়মিত টহল দিচ্ছিলো। এ সময় তারা খবর পান পৌর শহরের আরশিনগর এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছিলো। এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও শক্তির মহড়া দিয়ে অটোরিকশা ও বিভাটেক থেকে চাঁদা তুলতে দেখতে পায়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ইজারদার দাবিদার আলমগীরের নির্দেশে একদল লোক পুলিশের কাজে বাধা দেয় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর আক্রমণ করে। তারা অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপারকে কিল, ঘুষি মারা শুরু করেন। পরে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন। ওই সময় পরে সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা করার পর নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে রোববার (৫ অক্টোবর) নরসিংদী মডেল থানা এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
গত কয়েকদিন আগে নরসিংদী সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীম জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেন। এরপর থেকে তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। তিনি নিজে তা ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। একই সঙ্গে তার ওপর যে কোনো সময় হামলার আশঙ্কার কথা জানান।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জেলার সুশীল সমাজ। পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আরিফ পাঠান বলেন, পুলিশের ওপর হামলায় প্রমাণ করে নরসিংদী এখন কতটা অনিরাপদ। যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে তারাই এখন অনিরাপদ হয়ে গেছে। এখন কঠোরভাবে চাঁদাবাজ ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। পুলিশের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরাধী যেই হউক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার এখন ভালো আছে।
জেএইচ