রংপুর: সদ্য কারামুক্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, যারা ভারতের তোষামোদি করবে, তাদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবে না। কারণ ভারত কখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন সহ্য করে না।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈদ পুনর্মিলনী ও কারামুক্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শুকরানা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে আমাকে বিনা দোষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার রায় কার্যকর করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সবার ভালোবাসায় মুক্তি পেয়েছি। মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এতদিন জনগণকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। দ্রুত সে অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সবাইকে শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে, গঠনমূলক সমালোচনার রাজনীতি করতে হবে। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমার যত সামান্য, যতটুকু ছিল, মৃত্যুকে জেনেই সবটুকু পরিবারকে দিয়ে দিয়েছি। আমি আপনাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই। আমার কাছে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, সব ধর্ম বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষে সবাই আমার কাছে সমান। মহান আল্লাহ আমাকে নতুন করে জীবন দিয়েছেন। আমি সর্বশক্তি দিয়ে আপনাদের খেদমত করে যেতে চাই।
তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির এস এম আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হালিম, রংপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, এটিএম আযম খান, মজলিশে শুরা সদস্য, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার, তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ যুব বিভাগ, ছাত্রশিবির ও শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকালে তিনি ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে রংপুর মহানগর ও জেলা এবং নীলফামারী জেলা জামায়াত, শিবির নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে তিনি তারাগঞ্জ উপজেলায় শুকরানা সমাবেশে বক্তব্য দেন। বিকেল ৪টায় তিনি জন্মভূমি বদরগঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এ মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছিলেন।
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল। এ আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল।
এ পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।
এসআই