বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সোহেল ওরফে মিরাজ খান (৩৫) নামে এক কৃষককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি তরমুজ আবাদের জন্য জমি লিজ না দেওয়ায় ‘ডাকাত’ আখ্যা দিয়ে সোহেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে উপজেলার দক্ষিণ কবাই (চর কবাই) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন। নিহত সোহেল দক্ষিণ কবাই গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম খানের ছেলে।
সোহেলের কন্যা ফাতিমা জানান, তাদের জমি লিজ নিয়ে গতবছরে তরমুজ আবাদ করে একই গ্রামের শাহীন হাওলাদার। তরমুজ বিক্রি করে প্রচুর টাকা লাভ করছে, কিন্তু তাদের টাকা ঠিকমতো দেয়নি। তাই এবার তাদের জমি দেওয়া হয়নি। জমিতে চাষ দেওয়া হয়েছে। এতে তার ক্ষিপ্ত হয়। রাতে ঘরে ফুফু ও বাবা ছাড়া কেউ ছিল না। তখন শাহীন বারবার ফোন দিলেও বাবা ধরেনি। পরে শাহীন তার দুই ভাই মাসুদ ও শামীমকে নিয়ে বাড়িতে আসে। তারা বাবাকে (সোহেল) ডেকে নিয়ে জমি চায়। বাবা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।
নিহতের মা নিলুফা বেগম (৬০) ও নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৩০) বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা। জমি লিজ না দেওয়ায় শাহিন হাওলাদার ও তার লোকজন সোহেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হাত-পা ভেঙে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, সোহেলের বিরুদ্ধে বরিশাল ও পটুয়াখালী থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ১০টি মামলা রয়েছে। তরমুজ আবাদের জমি না দেওয়ায় সুযোগ নিয়েছে শাহীন হাওলাদার। তিনি ও তার দুই ভাই মিলে সোহেলকে ডাকাত সাজিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
শাহিন হাওলাদার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রাত ১২টার দিকে সোহেলসহ ১৪-১৫ জন ডাকাত তার ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে ঘরে থাকা নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ও প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। এ সময় তিনি শ্বশুরবাড়ি বাউফলের কাঠিপাড়া এলাকায় ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ডাকাতদল পার্শ্ববর্তী শওকত খানের বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করে। তখন এলাকাবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করে। এ সময় সোহেলকে আটক করা হলেও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শনিবার রাতে সময় ৯৯৯ থেকে একটি কল আসে চর কবাই গ্রামে একজন ডাকাত আটকে রাখা হয়েছে। ওই খবর পেয়ে তিনিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহেলের হাত পা বাঁধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, নিহতের পরিবারের দাবি করেছে, পূর্ব-শত্রুতার জেরে স্থানীয় শাহীন হাওলাদার পরিকল্পিতভাবে সোহেলকে হত্যা করেছে। দুটো বিষয় গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এমএস/এএটি