ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

কাপ্তাই হ্রদে দেদারসে বালু উত্তোলন!

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২১, অক্টোবর ৫, ২০২৫
কাপ্তাই হ্রদে দেদারসে বালু উত্তোলন! রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়নের বিলাছড়ি পাড়ায় কাপ্তাই হ্রদ থেকে ড্রেজার দিয়ে  বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 

রাঙামাটির যোগাযোগ, কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাণ ভোমরা বলা হয় মনুষ্যসৃষ্ট নীলাভ জলরাশির সুবিশাল কৃত্রিম ‘কাপ্তাই হ্রদ’। এ হ্রদের ওপর ভিত্তি করে পুরো রাঙামাটির জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছে।

দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ততই এ হ্রদকে ঘিরে এ জেলার পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটছে।

অথচ পাহাড়ি এ অঞ্চলটির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কাপ্তাই হ্রদের পরিবেশের ক্ষতি করে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ব্যবসায়ী নামে একদল দুর্বৃত্ত।
চক্রটি প্রতিনিয়ত কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে কোনো অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। উত্তোলন করা এসব বালু মূল শহরে নিয়ে এসে জেলার বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি সদর, কাউখালী, নানিয়ারচর, লংগদু ও কাপ্তাই উপজেলায় বালু উত্তোলনকারী চক্রগুলো কাপ্তাই হ্রদ থেকে অবাধে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়- রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়নের দুর্গম মানিকছড়ি মুখ, বিলাইছড়ি পাড়া এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ থেকে বালু উত্তোলনকারী চক্রটি স্থানীয় বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে আঁতাত করে নিদিষ্ট একটি চাঁদা দিয়ে এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কেউ ভয়ে তাদের কাজে বাধা দিতে আসে না।  

তবে স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার হ্রদের বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও প্রশাসনের কার্যক্রম কিছুটা শীতল হয়ে গেলে চক্রটি ফের তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে হ্রদ থেকে বালু উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মূল চক্রটি আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় এবং প্রশাসন কর্তৃক ড্রেজারগুলো জব্দ করতে না পারায় স্থান পরিবর্তন করে হ্রদের বিভিন্ন স্থান থেকে সমানতালে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।  

জেলা প্রশাসন গত ৩০ জুলাই জেলা সদরের মগবান ইউনিয়নের রইন্যাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার সময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ফাহিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল।

পরিবেশবিদরা বলছেন, হ্রদ থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করার কারণে হ্রদের দলদেশ আলগা হয়ে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত ভাঙছে  হ্রদের পার। মৎস্য ও জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিনষ্ট হচ্ছে, হ্রদ হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। এসব কারণে কাপ্তাই হ্রদ একদিন বিলীন হয়ে যাবে।

রাঙামাটির পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের সেক্রেটারি হেফাজত-উল বারী সবুজ বলেন, দেদারসে কাপ্তাই হ্রদ থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে পরিবেশের জন্য, কাপ্তাই হ্রদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের তলদেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে হ্রদের পার ভেঙে পাহাড় ধসের শঙ্কা বাড়বে, ধ্বংস হয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড় কাটা, কাপ্তাই হ্রদ থেকে বালু উত্তোলনসহ অর্থাৎ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কর্মকাণ্ড কোথাও হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হয় না।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। যেখানে এমন কর্মকাণ্ড চলবে সেখানে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করবে বলে যোগ করেন তিনি।  

জেলার সচেতন মহল মনে করছে, শুধু অভিযান চালিয়ে কাপ্তাই হ্রদ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রথমে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত ড্রেজার, নৌকা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করতে হবে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জরিমানা করলে হবে না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তাহলে হ্রদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।