ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

রামোজি ফিল্ম সিটি: এক পাড়াতেই দেশ-বিদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৯
রামোজি ফিল্ম সিটি: এক পাড়াতেই দেশ-বিদেশ রামোজি ফিল্ম সিটি, স্বপ্নলোকের ফটক। ছবি: বাংলানিউজ

রামোজি ফিল্ম সিটি (হায়দ্রাবাদ) ঘুরে: প্রখর রোদের তেজে মাথায় পেপার বা হ্যাট চেপেও কুলোনো যাচ্ছে না। এরমধ্যেই মধ্যাহ্নভোজের পর সবাই লাল বাসে চেপে বসলো রামোজি ফিল্ম সিটি ঘুরে দেখতে। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম টু ইন্ডিয়ার ৩ নম্বর বাস-গ্রুপের জন্য নির্ধারিত ফিল্ম সিটির ৪৪ নম্বর বাসে গাইড হিসেবে উঠলেন সুপ্রিয় বিশ্বাস।

চমৎকার বাংলায় ফিল্ম সিটি দেখিয়ে বর্ণনা দিতে থাকলেন তিনি; ‘এই যে বাঁয়ে খালি সবুজ সুন্দর মাঠটা দেখছেন, এখানেই ‘ডার্টি পিকচার’র সেই বিখ্যাত গানটার শুটিং হয়েছিল। বাসের ডেলিগেটরা শোর তুললেন? ‘উ লা লা?’ সুপ্রিয় মিষ্টি হাসলেন, ‘সবার ভালো মনে আছে দেখছি’।

‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমার ‘উ লা লা’ গানের শুটিং যে মাঠে হয়েছিল, সে মাঠ।  ছবি: বাংলানিউজপাহাড়ি ও আঁকা-বাঁকা রাস্তা ধরে এগোতে থাকে গাড়ি, সুপ্রিয় দেখিয়ে চলেন একের পর এক শুটিংয়ের বাড়ি, হাসপাতাল, আদালত, ট্রেন স্টেশন, সেন্ট্রাল জেইল, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, হেলিপ্যাড, বিমানবন্দর, এমনকি বিদেশি বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ভবন- নিদর্শক ইত্যাদি। এতোক্ষণ রোদের যে প্রখরতা খানিকটা ক্লান্ত করে তুলতে চাইছিল, ফিল্ম সিটির বিস্ময়কর চিত্র যেন সবার গা ঝাড়া দিয়ে চঞ্চল করে দিলো। ফিল্ম সিটিতো নয়, যেন এক খণ্ড বিশ্ব।

তেলেগু চলচ্চিত্র প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব চেরুকুরী রামোজি রাওয়ের চিন্তাপ্রসূত এ ফিল্ম সিটি। হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রায় ২ হাজার একর জমির ওপর ১৯৯৬ সালে নির্মিত এই সিটি যেন বাস্তব আর কল্পনা এবং প্রকৃতি ও কৃত্রিমতার মিশেলে গড়ে তোলা এক স্বপ্নপুরী। ছিমছাম পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সবুজ ঘাসের গালিচা আর হরেক রকমের ফুলের বাগানে এই সিটি যেন দক্ষ শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা এক নয়নাভিরাম চিত্রপট। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি অনুযায়ী, এই ফিল্ম সিটির স্টুডিওই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফিল্ম স্টুডিও কমপ্লেক্স।
রামোজি ফিল্ম সিটির পরিচ্ছন্ন সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজসুপ্রিয় বলে চলেন, এখানে শুটিংয়ের সেট হিসেবে এমন বাড়ি রয়েছে, যার একেক পাশে একেক রকম নকশা এবং আলাদা দরজা, সেই একই বাড়িতেই আলাদা দরজা ব্যবহার করে নায়ক-নায়িকাদের আবাসসহ একাধিক বাড়ির শুটিং শেষ করা হয়ে থাকে। আবার এমনও ভবন রয়েছে, যেটা কোর্ট হিসেবেও ব্যবহার হয়, আবার অফিসকক্ষ হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। কোনো হাসপাতালের সেট ব্যবহার হয় মানসিক থেকে শুরু করে সব রকমের অসুস্থতার হাসপাতাল হিসেবেও।  

ফাঁকে ফাঁকে সুপ্রিয় দেখিয়ে চলেন, ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ চিত্রায়নের সেই হাসপাতাল, ‘মাগাধীরা’ সিনেমার ফাইটিং দৃশ্য ধারণের সেই রাস্তা, ‘রা.ওয়ান’ সিনেমার ফাইটিং দৃশ্যধারণের মাঠ। হাসতে হাসতেই তিনি বলেন, কোনো নির্মাতার যদি বাজেট কম হয়, কিন্তু তিনি বিদেশি, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার লোকেশন দেখাতে চান চলচ্চিত্রে, তবে তারও ব্যবস্থা আছে এই ফিল্ম সিটিতে।

সুপ্রিয়র ভাষ্য অনুযায়ী, বিদেশি শহরগুলোর আদলে গড়ে তোলা বিস্ময়কর অ্যাভিনিউটির নাম প্রিন্সেস স্ট্রিট। ভারতের উত্তরাঞ্চলের সড়ক ও ভবনগুলোর আদলে গড়ে তোলা অংশটিকে বলা হয় নর্থ টাউন। এছাড়া শাস্ত্রীয় কোনো উপখ্যান অনুযায়ী কিছু নির্মাণের জন্য আছে ‘ভগবত্ম সেট’, আছে বিভিন্ন অঞ্চলের বাগানের আদলে ‘আসকরি গার্ডেন সেট’, ইসলামী স্থাপত্য ধাঁচের ‘মুঘল গার্ডেন’, প্যাগোডার মতো করে বানানো ‘জাপানিজ গার্ডেন’, ‘সান ফাউন্টেইন গার্ডেন’ প্রভৃতি। চাহিদার যেসব জায়গা বা স্থাপনা নেই, সেগুলোও প্লাইউড, কাঠ আর স্টিলের ফ্রেমে তৈরি করে দিতে সময় নেয় না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ।
 বিশ্বখ্যাত সিনেমা ‘বাহুবলী’ শুটিংয়ের সেট।  ছবি: বাংলানিউজচলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এতো বিচিত্র রকমের ব্যবস্থা আছে বলেই কি-না রামোজি ফিল্ম সিটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এটি এমন এক জায়গা, যেখানে একজন নির্মাতা চিত্রনাট্য নিয়ে ঢুকে সিনেমা নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন। ’

সড়ক ধরে চলতে এসব সেট ঘুরতে ঘুরতে গাড়ি দাঁড়ায় বাহুবলী সিনেমার শুটিংয়ের সেটের পাশে। গাড়ি থামতেই ডেলিগেটরা ছুটে যান বিশাল সেই সেটে। পর্দায় দেখা সিনেমার সেই সিংহাসন, রথ, মামা কাটাপ্পার সঙ্গে শৈশবে গাছতলায় রাজকুমার বাহুর খেতে বসার গাছতলা, অভিনয়শিল্পীদের প্রতিকৃতি দেখার অনুভূতি সবাইকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। সাউন্ড বক্সে শিবগামী দেবীর কণ্ঠে সিনেমার বিভিন্ন সংলাপ যেন চলচ্চিত্রেই ডুবিয়ে দিচ্ছিলো ডেলিগেটদের। ভারতবর্ষতো বটেই, গোটা সিনেমা-দুনিয়ার অন্যতম আলোচিত চলচ্চিত্রের সেটে এসে স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করতে কে না চায়? ডেলিগেটরা ফিল্ম সিটির এই প্রান্তে এসে যেন উচ্ছ্বাসে মাতলেন। রামোজি ফিল্ম সিটির সামনে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের শতজন।  ছবি: বাংলানিউজতবে রামোজি ফিল্ম সিটি যে কেবল সিনেমা নির্মাণের জন্য, তা নয়। এখানে রয়েছে সব বয়সী দর্শনার্থীর বিনোদনের নানা আয়োজনও। সিনেমা নির্মাণের অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য অ্যাকশন থিয়েটারসহ আছে চারটি অ্যাট্রাকশন, পাঁচটি শো এবং সুপার জেট, স্কেটিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমসসহ হরেক রকমের রাইড। এর পাশাপাশি আছে খাবার-দাবার এবং শপিংয়েরও ব্যবস্থা।

রামোজি ফিল্ম সিটি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আকর্ষণীয় এই সিটির টানে স্মৃতি জমা করতে প্রতিবছর এখানে ১৫ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী ভিড় জমায়। এই সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছেই।  সকাল ৯টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত টিকিট বুক করে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঘোরা যায় ফিল্ম সিটিতে।

আরও পড়ুন
** সালার জং জাদুঘর যেন এক দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহশালা
** সান্ধ্যকালীন সাউন্ড-লাইট শো নিয়ে গেলো গোলকোন্ডা যুগে
** উত্তম-সুচিত্রা-শাহরুখ-ঐশ্বরিয়াদের সঙ্গে লাঞ্চ!
** থিয়েটারে ঢুকেই নায়িকা কানেতা, ‘ফিল্ম’ তৈরি ১৫ মিনিটে!
** উষ্ণ অভ্যর্থনা-বর্ণিল আয়োজনে শতযুবাকে আপন করলো জেএনটিইউ
** কেক কেটে জাহানারার জন্মদিন উদযাপন করলো শতযুবা
** নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে
** মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩৮৪৩ ভারতীয় সেনার স্মৃতিরমিনারে
** মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান
** ২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'
** ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
** মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
** ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ 
** ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
** ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু


বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।