ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ মে ২০২৪, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেমের ঘটনায় বন্ধুকে হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
প্রেমের ঘটনায় বন্ধুকে হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

লক্ষ্মীপুর: প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে যুবক খুন হওয়ার মামলায় লক্ষ্মীপুরের আদালত তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

নিহত মেহেরাজ হোসেন (১৯) নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন উত্তর হুগলি গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। এ ঘটনায় মামলার বাদী ছিলেন মেহেরাজের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান (২৯)।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নোয়াখালীর সুধারাম থানার উত্তর হুগলি গ্রামের মো. ইউসুফের ছেলে আবদুল্যাহ আল মামুন (২২), একই থানাধীন মাতাহাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সজিব আহম্মদ (২৬) ও রওয়াল দিয়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে তানভীর হোসেন বিজয় (২০)।

আদালতের পাবলিক পসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আসামিরা ভিকটিম মেহেরাজকে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে রায়ের পর আদালতে উপস্থিত দণ্ডিতদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জানিয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ভিকটিম মেহেরাজ নিখোঁজ হন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি মেহেরাজের ভাই মাহবুবুর রহমান নোয়াখালীর সুধারাম থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের টক্কার পোল ব্রিজের নিচ থেকে মেহেরাজের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় দাশেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাহবুব ২ মার্চ বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে হত্যাকারী কারো নাম উল্লেখ না করলেও মেহেরাজের বন্ধু মামুনের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আবদুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তখন তিনি হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

২০২০ সালের ৩০ মে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন আদালতে হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেন জমা দেন।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃষ্টি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাটের কাপড় দোকানের কর্মচারী তানভীর হোসেন বিজয়ের। একই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মেহেরাজও। এতে তানভীর তার অন্য দুই বন্ধু আবদুল্লাহ আল মামুন ও সজীব আহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তাদের জন প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি মামুন তার বন্ধু মেহেরাজকে লক্ষ্মীপুরের দাশেরহাট থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করতে বলে। ভাড়া করা মোটরসাইকেলটি নিয়ে ওই দিন তারা বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করেন। পরে বিকেলে তানভীর নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাট থেকে একটি বস্তা, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও স্পিড কিনে নেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তানভীর, সজিব, মেহেরাজ ও মামুন মোটরসাইকেলে করে মুন্সি তালুক গ্রামে আসেন। সেখানে তারা সবাই স্পিড পান করেন আর নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশানো স্পিডটি মেহেরাজকে দেওয়া হয়। এতে মেহেরাজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তানভীর মেহেরাজের কোমরের বেল্ট খুলে তার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

হত্যার পর মেহেরাজের মরদেহটি একটি বস্তায় ভরে তানভীর এবং মামুন তা মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের টক্কার পোল ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেন।

ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। আদালত পুলিশের প্রতিবেদন, আসামির জবানবন্দি এবং সাক্ষ্য, প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।