ঢাকা, বুধবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

রোহিঙ্গা সংকট: মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টির আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২৭, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
রোহিঙ্গা সংকট: মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বন্ধ ও দ্রুততম সময়ে তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার এবং আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে এ সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব দেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

নিউ ইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের হলরুমে এ সম্মেলন শুরু হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও মিয়ানমারেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার এবং আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে এবং দ্রুততম সময়ে রাখাইনে তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা শুরু করে। এটাই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন শুরু করা। আন্তর্জাতিক সুরক্ষার ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে প্রত্যাবাসনে ব্যয় অনেক কম হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বারবার তাদের মাতৃভূমিতে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে, যারা সম্প্রতি সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতির কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণহত্যা শুরুর আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ সংকট সমাধানের উদ্যোগের ঘাটতি চোখে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশও এ সংকটের ভুক্তভোগী। আমরা বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করতে বাধ্য হচ্ছি। মাদক প্রবাহসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রাখাইন হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ছাড়া আমাদের উন্নয়নগত চ্যালেঞ্জ, যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কারণে, আমরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান মেনে নিতে পারি না।

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব:

রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রথম, রাখাইনকে স্থিতিশীল করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করা।

দ্বিতীয়, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করা এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা; বিশেষ করে যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছে এবং যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কাজটি করা।

তৃতীয়, রাখাইনকে স্থিতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া এবং সেখানে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

চতুর্থ, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় টেকসইভাবে একীভূত করার জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

পঞ্চম, যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতাদের সহায়তা সংগ্রহ করা।

ষষ্ঠ, জবাবদিহিতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা।

সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা করা।

সবশেষ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আর কতদিন তাদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রাখবো। আসুন, আমরা একসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি এ সংকটকে চিরতরে সমাধান করবো।

এমইউএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।