ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে জাতীয় সংসদের সদস্যরা কেবল অর্থবিল এবং আস্থাভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন, কিন্তু অন্য যেকোনো বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন; এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনি যদি নিজ দল থেকে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে সংসদে তার আসনটি আসন শূন্য বলে বিবেচিত হবে। দীর্ঘদিন ধরেই এ বিধানটির সমালোচনা হচ্ছিল এই বলে যে, এর কারণে সংসদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবাই দুটি বিষয়ে একমত হয়েছে – আস্থা ভোট ও অর্থবিল ছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে দলের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন।
চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলের মধ্য থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাবলিক অ্যাকাউন্টস্ কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস্ কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। এছাড়া সংসদে নারীদের জন্য ১০০ আসনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবে তাদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
আজকের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সংবিধানে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও কমিশনের সহ-সভাপতি জানান। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। আগামীতে পুনর্বার আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে৷
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এতে আজকের অসমাপ্ত আলোচনাসহ জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল (এনসিসি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷
টিএ/এইচএ/