রংপুর: যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতে না পরার শঙ্কায় ভুগছে তারাই নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেছেন, যারা কোটি কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করতে পারবে না বলে শঙ্কায় ভুগছে তারাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির প্রবর্তনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যে ৩১টি দল রয়েছে, তার মধ্যে ২৫টি দলই পিআর পদ্ধতি চায়। অথচ বিএনপির কিছু নেতা বলছেন, পিআর বাংলাদেশের মানুষ বোঝে না। তারা পিআরের সঙ্গে ইভিএমের তুলনা করছেন। ইভিএম আর পিআর এক নয়। তাই দেশের মানুষকে আর হাইকোর্ট দেখাবেন না। অনেক নেতা বলছেন, পিআর খায় না মাথা দেয়। কী আজব ব্যাপার। পলিটিক্যালি কেউ এমন মন্তব্য করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর প্রধান উপদেষ্টার ডাকে আমরা সাড়া দিয়ে এই অন্তবর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরও আবারো কেন আন্দোলনে নামতে হচ্ছে? কারণ সরকার চাপের মুখে মাথা নত করেছে। তাই সরকারকে সোজা করার জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছি।
অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, সাংবিধানিক পদে থেকে একদিন হঠাৎ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলে বসলেন, সংবিধানে পিআর পদ্ধতি নেই। তাই আগের নিয়মেই নির্বাচন হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির সুরে কথা বলছেন। আপনি সাংবিধানিক পদে থেকে এটা বলতে পারেন না। আমাদের কাছেও সংবিধান রয়েছে। সংবিধানের কোথাও নির্বাচন পদ্ধতি উল্লেখ নেই। তাই আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আপনারা পিআরের পক্ষে গণভোটের ব্যবস্থা করুন। এই গণভোটের মাধ্যমে পিআর নিয়ে মতামত নিন। অধিকাংশ জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও পিআর মানতে হবে। আর জনগণ যদি পিআর না মানে, তাহলে আমরা সেটা মেনে নেব।
‘গায়ের জোরে দেশ শাসনের সময় শেষ হয়ে গেছে। এই বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। বিরোধী দলকে দমন-নিপীড়ন করে, আইন-আদালতে মামলা দিয়ে দাবিয়ে রেখে আজীবন ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে। ’
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়ে একটি পার্টির প্রধানের সঙ্গে মিটিং করেছেন। লন্ডনে বসে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। নির্বাচনের ঘোষণা লন্ডনে বসে দিয়েছেন। দেশে ফিরে ঘোষণা দিতে পারতেন। তাছাড়া জুলাই সনদ ঘোষণার সময় আপনি বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। যার কারণে বিএনপি এই জুলাই সনদ ঘোষণায় খুশি। আমরা বুঝতে পারছি, রহস্যজনকভাবে একটি শক্তি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে পারছে না। তাই আমাদের দাবি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এখন একটি দল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলছে, এই সংস্কারের আইনি ভিত্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন, যত আইন সংস্কার করেন আমরা ক্ষমতায় গেলে তা মুছে দেব। তারা এখনই যদি এসব বলতে পারে তবে তাদের ইচ্ছার মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়ন না করে আগের মতো নির্বাচন দিলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে, ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। কিন্তু বাংলার মানুষ তা মেনে নেবে না।
সমাবেশে রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, মহানগর সেক্রেটারি কেএম আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, সহকারী সেক্রেটারি আল-আমিন হাসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাাক আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুমন সরকার, জেলা শাখার সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে রংপুর নগরীতে বড় শোডাউন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। টাউনহল মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে রংপুর জেলার বিভিন্ন থানা ও নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মী জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
এ সময় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন— ‘এই মুহূর্তে দরকার, পিআর আর সংস্কার’; ‘সংসদের উভয় কক্ষে, পিআর চালু করতে হবে’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘১৪ দলের কার্যক্রম, নিষিদ্ধ কর করতে হবে’। বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর শাপলা চত্বরে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এইচএ/