সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের (৭৫) হাতে হাতকড়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদিন ধরে ঘুরছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, মৃত নুরুল মজিদের হাতে হাতকড়ার ছবি এটি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চারতলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারাবন্দি সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাকে নরসিংদীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কিন্তু মৃত্যুর কিছু সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ছবির বিষয় কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সাবেক শিল্পমন্ত্রীকে বহুবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। ছবিতে ভালো মতো লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে, হ্যান্ডকাফ পরা ছবিটি হাসপাতালের ওয়ার্ডের বেডের, কিন্তু তিনি মারা যান নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে। সেখানে তো হ্যান্ডকাফ পরানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের এ নেতাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে কারারক্ষীরা ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে তাজে ভর্তি করেন। পরের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতির কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দেশনায় হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চারতলায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি সূত্রে জানা যায়, সাবেক এ শিল্পমন্ত্রীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। তিনি আগে থেকেই বাইপাস সার্জারি করা রোগী ছিলেন।
এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ এর অধিক বার তাকে চিকিৎসা করানো হয়। এর পরে তিনি আবারও অসুস্থ হলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের হাতে হ্যান্ডকাফ পরা ছবি হাসপাতালে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়। তিনি মারা গেছেন আইসিইউতে, সেখানে অবশ্যই তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়নি। এছাড়া ওনাকে বহুবার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু তিনি বন্দি, কারারক্ষীদের পাহারায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সেই ছবির দিকে ভালো মতো লক্ষ্য করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে শুয়ে আছেন।
তিনি আরও বলেন, কারাবিধি (জেলকোড) অনুযায়ী যেকোনো দুর্ধর্ষ বন্দিকে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া অবস্থায় ডান্ডাবেড়ি অথবা হাতে হ্যান্ডকাফ পরানোর বিধান রয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকে কারারক্ষী ও ডিএমপি পুলিশ। এছাড়া রোগ ও বয়স বিবেচনা করে অনেক সময় অনেক বন্দির হাতেও হ্যান্ডকাফ পরানো হয় না। পাশাপাশি কোনো নারী বন্দির হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার নজির নেই।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটলে সেপ্টেম্বর মাসে র্যাব গুলশান এলাকা থেকে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করে। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছর ৪ আগস্ট নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে নূরুল মজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এজেডএস