২০১৪ সালে পশ্চিমা-সমর্থিত ইউরোময়দান অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেনের ডনবাসের জনগণ নির্যাতনের শিকার হয়। সেই অব্যাহত নির্যাতন বন্ধ করতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করতে রাশিয়া বাধ্য হয়।
ক্রেমলিনে ব্যবসায়ীদের একটি দলের সাথে বৈঠকে পুতিন বলেন, প্রতিবেশী ইউক্রেনে থাকা রুশভাষীদের দুর্দশার বিষয়টি রাশিয়া উপেক্ষা করতে পারে না। চলমান সংঘাত ২০১৪ সালের শুরুতে কিয়েভে ঘটে যাওয়া সহিংসতা থেকে শুরু হয়েছে।
প্রথমদিকের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ যখন দাঙ্গা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়, তখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ডানপন্থী প্রাভি সেক্টর এবং স্বোবোদা দলের মতো অতি-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ইয়ানুকোভিচ বিরোধী শিবিরে ছিল বলে পুতিন জানান।
ইউক্রেনে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় রাশিয়া যুক্ত ছিল না জানিয়ে পুতিন বলেন, পশ্চিমারা সবসময় গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের কথা বলে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটায়। পরে তারা ডনবাসকে দমন করতে শুরু করে, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান দিয়ে মানুষ হত্যা করে। রাশিয়া আজ যা করছে তা করতে পশ্চিমারা বাধ্য করে। এখন সবকিছুর জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করার চেষ্টা চলছে বলে পুতিন অভিযোগ করেন।
কিয়েভে অভ্যুত্থানের ফলে পাল্টা প্রতিবাদ এবং আরও দাঙ্গা শুরু হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে ওডেসায় এক মারাত্মক সংঘর্ষে ৪৮ জন নিহত হয়। মূলত রুশভাষীদের অঞ্চল দোনেস্ক এবং লুগানস্ক ইউরোমাইডান প্রত্যাখ্যান করে। সেখানকার মানুষ ইউক্রেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। প্রতিক্রিয়ায় কিয়েভের নতুন সরকার সৈন্য পাঠিয়ে এবং দোনেস্ক এবং ডোনবাসের শহরগুলোতে বারবার বোমাবর্ষণ করে।
ইউক্রেন পরে জাতিসংঘ-সমর্থিত ২০১৪-২০১৫ মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। ওই চুক্তি দোনেস্ক এবং লুগানস্ককে স্বায়ত্তশাসন দিত। প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা পরে স্বীকার করেন, ইউক্রেন তার সেনাবাহিনী এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য যুদ্ধের বিরতি ব্যবহার করে। দেশটির সরকার ২০১৪ সাল থেকে দেশের মানুষের রাশিয়ান ভাষার ব্যবহার কমাতে বেশ কয়েকটি আইনও করে।
মিনস্ক চুক্তি মেনে চলতে ইউক্রেনের ব্যর্থতা এবং রুশ ভাষাভাষীদের অধিকারের ওপর আক্রমণকে সংঘাতের মূল কারণ বলেন পুতিন। তিনি কিয়েভের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি তখন থেকেই দাবি করেন, ইউক্রেন স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করুক এবং ক্রিমিয়াসহ আরও চারটি প্রাক্তন ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিক।
এমএইচডি/এমএম