শাপলা প্রতীক পেতে অনড় অবস্থানে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শাপলা প্রতীক না পেলে রাজপথে নামবে দলটি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সূত্র জানায়, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক বাছাই ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠির জবাব দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এরপর রাজপথে কর্মসূচি শুরু করবে দলটি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময় প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম ও মোবাইল চেয়েছিল। পরবর্তীতে পরিবর্তন করে শাপলা, লাল শাপলা অথবা সাদা শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক চাওয়া হয়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে পাঠানো এক চিঠিতে শাপলা, সাদা শাপলা ও লাল শাপলা বাদে বেগুন, থালা, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে দলটিকে নিজেদের মার্কা বাছাই করতে বলে। ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে একটি প্রতীক পছন্দ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করতে বলা হয় ওই চিঠিতে।
যে প্রতীকগুলো থেকে এনসিপিকে তাদের মার্কা পছন্দ করতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো— আলমিরা, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক ,মোরগ, কলম, তরমুজ, বাঁশি, লাউ, কলস, চিংড়ি, থালা, বেঞ্চ, লিচু, দোলনা, প্রজাপতি, বেলুন, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।
এদিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়াকে নির্বাচন কমিশনের ‘স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত ও একরোখা মনোভাব’ বলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
দলটির সূত্র বলছে, এনসিপি আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাব দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে। একই সঙ্গে শাপলা প্রতীক না পেলে রাজপথে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি।
খুব শিগগিরই রাজপথের কর্মসূচি ঠিক করতে দলটির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন বলেও জানা গেছে।
এনসিপির নিবন্ধন–সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেব। ৭ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের চিঠির জবাব দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন, আমরা সেই জবাবটা দেব। এরপর থেকে রাজপথে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে।
তিনি বলেন, রাজপথে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। গণমানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন ধরনের কর্মসূচিই দেওয়া হবে।
জহিরুল ইসলাম আরও জানান, তারা শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনড়। জাতীয় নাগরিক পার্টির শুভাকাঙ্ক্ষী-সমর্থক, সারা দেশের তৃণমূলের মানুষ সবাই শাপলা প্রতীক চায়।
শাপলা প্রতীককে এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই নেতা বলেন, যারা পুরোনো রাজনৈতিক দল তারা তো আসলে ভালো ভালো প্রতীকগুলো নিয়ে নিয়েছে। কাপ-পিরিচ এ ধরনের প্রতীক তো মানুষকে কানেক্ট করার মতো প্রতীক না। এই জন্য আমরা শাপলাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, শাপলা যে আমরা পছন্দ করে নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, এরকম না। নির্বাচন কমিশন যে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছিল, নতুন যে প্রতীকগুলো তারা করবে, সেগুলোর মধ্যে শাপলা ছিল। ওইটা দেখেই আমরা শাপলাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছি। এমন না যে আমরা তাদের অনুরোধ করে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা প্রতীক দিতে আইনি কোনো বাধা নেই দাবি করে জহিরুল বলেন, আমাদের মনে হয়েছে তারা (ইসি) এখানে বড় রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত অথবা কোনো ইনিস্টিটিউশন দ্বারা প্রভাবিত।
এর আগে শাপলা প্রতীকের আবেদন করেছিল নাগরিক ঐক্য। তখন তাদেরও এই প্রতীকটি দেওয়া হয়নি। তাদের কেতলি প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রতীকটির জন্য নাগরিক ঐক্য আগে আবেদন করেছিল, এই বিষয়টিও সামনে এনেছে।
সম্প্রতি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক ফেসবুক পোস্টে জানান, শাপলা প্রতীক এনসিপিকে দিলে মামলা করবেন না। মান্নার এই পোস্টের পর এনসিপি নেতাকর্মীরা শাপলা প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে আরও বেশি আশাবাদী হন।
নাগরিক ঐক্যের এই অবস্থানের পর শাপলা প্রতীক পেতে আর কোনো আইনি এবং রাজনৈতিক বাধা নেই বলে দাবি করে এনসিপি।
গত শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, আইনগত ও নৈতিকভাবে তারা শাপলা প্রতীক রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এদিকে ‘শাপলা প্রতীক বরাদ্দ প্রশ্নে এনসিপির ব্যাখ্যা’ শিরোনামে এক বার্তায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শাপলা প্রতীক না দেওয়াকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত ও একরোখা মনোভাব’ হিসেবে মন্তব্য করে ইসি-কে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
এনসিপির আহ্বায়ক অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ আগস্টের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও আশ্চর্যজনকভাবে ডিজিএফআইসহ আরও বেশ কিছু সংস্থার লোগোতে শাপলা রয়েছে এবং একারণে আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের মনোভাবের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের লোগোতে ধানের শীষ, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর লোগোতে ঈগল, সুপ্রিম কোর্টের লোগোতে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ইতোপূর্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রতীক হিসেবে ঈগল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।
শুধুমাত্র ডিজিএফআই-এর লোগোর সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকার কারণ দেখিয়ে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তালিকা থেকেই এনসিপিকে প্রতীক বেছে নিতে হবে জানিয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে যে ১১৫টা প্রতীক আছে, সেখানে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা নেই। তাই শাপলা প্রতীক এনসিপি পাবে না।
এনসিপির আন্দোলনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক নেতারা অনেক কিছু বলেন, বলার অধিকার তাদের আছে। আমরা শুনব, কিন্তু আইন অনুযায়ী কাজ করব।
আরও পড়ুন:
এনসিপিকে বেগুন-বালতিসহ ৫০ প্রতীকের অপশন
এমইউএম/এমজেএফ