ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কোভিড-ইউরোপে যুদ্ধ সত্ত্বেও সরকার দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ নিয়েছে: কাদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
কোভিড-ইউরোপে যুদ্ধ সত্ত্বেও সরকার দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ নিয়েছে: কাদের

ঢাকা: করোনাভাইরাস উত্তর পরিস্থিতি ও ইউরোপের চলমান যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছে, সে বিবেচনায় জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বাংলাদেশের দাঁড়ানোর বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো থাকায় দুটি সংকট থাকাকালীন সরকার দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষমতা দেখিয়েছে।

এমনকি ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ এর আলোকে বর্তমান বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (১১ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, অতি মারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ সারা বিশ্বে এক বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। উদ্ভূত বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী যে নতুন বাজেট উপস্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বাজেটকে স্বাগত জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, কোভিড উত্তর পরিস্থিতি ও ইউরোপের চলমান যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণভাবে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল এক জাতি গঠনের প্রত্যয়ে এটি বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তবতায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার এই বাজেট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন। শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দেড় দশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যখন গড় মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩ ও ৯ শতাংশ; পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশসমূহের মূল্যস্ফীতি যেখানে ৮ শতাংশের উপরে; সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শতকরা ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয়েছে।

শুধু তাই নয় বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অর্থবছরেই দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৩ হাজার ৯ মার্কিন ডলার।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো থাকার কারণে কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউরোপে যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও আমাদের সরকার দুঃসাহসী এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, এলএনজি রাসায়নিক সার, পাম-অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, গম, ভুট্টা, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৫ শতাংশ, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ শতাংশ, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ, গমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৮৫ ভাগ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের কল্যাণে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যা জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির চাপ দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সরকারের ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণেই এবারের বাজেটের প্রস্তাবনায় বাস্তবতার আলোকে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার গুরুত্বের সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমদানি নির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা বা কমানোর এবং একই সাথে উচ্চ ও মধ্যম অগ্রাধিকার-প্রাপ্ত সরকারি প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন তরান্বিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিকভাবে কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ, কোভিডের সময় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পসমূহের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি খাতে প্রণোদনা প্রদানসহ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় প্রণীত অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (২১০০) এর আলোকে বর্তমান বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আরেক ধাপ অতিক্রম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।