ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২২
উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

সাতক্ষীরা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগকবলিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের নেতারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপকূলের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন এডাব পরিচালক জসীম উদ্দীন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, বিএমএ দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. শহীদুল্লাহ, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, ফেইথ ইন অ্যাকশন’র কর্মসূচি সমন্বয়কারী তীমন বাড়ই, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন, মৃত্তিকা সমাজ উন্নয়ন সংগঠনের খাদিজা খাতুন, ঢাকাস্থ পাইকগাছা সমিতির জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এসব এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উপকূলবাসীর সুপেয় পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে উপকূলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি সেল্টার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। নদী ভাঙন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূলে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ ও সবুজ বেস্টনী গড়ে তুলতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দরিদ্র, দীর্ঘমেয়াদি লবণাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি, প্রভৃতির কারণে উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা। তাই ওই এলাকাকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নেওয়া দরকার। কারণ করোনা পরিস্থিতি এবং সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও ইয়াসের পর এখনো জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি বরং স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তাই নতুন করে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র খবরে ওই অঞ্চলের মানুষ চরম আতংকিত হয়ে পড়েছে।

লিডার্সের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর পরিবার প্রতি গড়ে এক লাখ ২ হাজার ৪৮৯ টাকার ক্ষতি হয়। এর মধ্যে একটি পরিবারে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার ২০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  

আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭টি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। যা এদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এ সংকট দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সব থেকে বেশি। এই সংকট থেকে উত্তোরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।