ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ মে ২০২৪, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মহাস্থানগড়ে প্রাচীন লিপিযুক্ত সিলসহ প্রত্ন সামগ্রীর সন্ধান

কাওছার উল্লাহ আরিফ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২২
মহাস্থানগড়ে প্রাচীন লিপিযুক্ত সিলসহ প্রত্ন সামগ্রীর সন্ধান প্রাচীন লিপিযুক্ত সিলসহ প্রত্ন সামগ্রী। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বগুড়ার পুন্ড্রনগরখ্যাত মহাস্থানগড়ে শুরু হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। এ বছর খননের প্রথমেই মিলেছে প্রাচীন আমলের সিলিং বা সিলের।

সেসঙ্গে একই স্তর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি পোড়া মাটির মাথা। এটা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি গুপ্ত পরবর্তী সময়ের অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে খনন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন লিপিযুক্ত এই সিলে থাকা লিপির পাঠোদ্ধার করা গেলে ধারণা পাওয়া যাবে। সেটা কোন আমলের এবং কী কাজে ব্যবহৃত হতো। এবারের খননে মূলত একটি বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান চালাচ্ছেন উৎখননে নিয়োজিতরা। যেস্থানে খনন হচ্ছে তার সঙ্গেই দক্ষিণাংশে ইতোপূর্বের খননে একটি মন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান পাওয়া যায়। এবার অপর মন্দির কমপ্লেক্স পাওয়া গেলে সেখানে পাশাপাশি দুটি বৌদ্ধ মন্দিরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থান গড়ের জাহাজঘাটা থেকে দক্ষিণে এবং পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে বৈরাগী ভিটার অবস্থান। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কেএন দীক্ষিতের নেতৃত্বে ২০ শতকের শুরুতে অর্থাৎ ১৯২৮-২৯ সালে প্রথম এই ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয়। ইতিহাসের লুকানো রহস্য জানতে এবং এটি দর্শকদের সামনে উপস্থাপনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেখানে আরও খননের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ থেকে পুনরায় খনন শুরু হয়। গত তিন বছর করোনা মহামারির কারণে খনন বন্ধ থাকলেও এবার পুনরায় এই ভিটায় খনন শুরু হয়েছে।

গত ১ মার্চ থেকে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ের বৈরাগীর ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়েছে। এই খনন কাজ আরও এক মাস চলবে বলে জানিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সেই হিসাবে এখন প্রায় প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে খনন কাজ। ইতোমধ্যেই সেখানে দুটি বৌদ্ধ স্তুপা (সমাধি সৌধ), প্রাচীন লিপি খচিত সিল, পোড়া মাটির নারী অবয়বের মাথা, অলংকৃত ইট, ভগ্ন মৃৎপাত্রসহ বিভিন্ন প্রত্ন সামগ্রীর সন্ধান মিলেছে। পুরো খনন সম্পন্ন হলে সেখানে প্রাচীন স্থাপত্য কাঠামো ছাড়াও অনেক প্রত্ন সামগ্রীর সন্ধান মিলবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এ বছর খনন কাজে ফিল্ড পরিচালক রয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা। এই খনন কাজে দলনেতা হিসেবে রয়েছেন মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা। এছাড়া খনন কাজে যুক্ত রয়েছেন রংপুরের তাজহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান নকশা অঙ্কনকারী আফজাল হোসেন মণ্ডল, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাসনাত বিন ইসলাম, আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ, সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া ও আলোকচিত্র মুদ্রাকর দিদারুল আলম। স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ১৬ শ্রমিক এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন খনন কাজে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, বৈরাগী ভিটায় খননের মাধ্যমে আরও প্রাচীন প্রত্ন নিদর্শন তথা ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিগত সময়ের খননে উন্মোচিত বৌদ্ধ মন্দিরের ঠিক উত্তর পাশেই আর একটি প্রাচীরের নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে। যা পাল আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই প্রাচীরটি সম্ভবত আর একটি বৌদ্ধ মন্দির কমেপ্লক্সের। সেই প্রাচীরের বেস্টনির সন্ধান করতেই এখন খনন পরিচালনা করা হচ্ছে। সেটি পূর্ণাঙ্গ উন্মোচিত হলে বলা যাবে যে সেখানে পাশাপাশি দুটি মন্দির ছিল। ইতোমধ্যে সেখানে প্রাপ্ত প্রত্ন সামগ্রীর যে সিলটি পাওয়া গেছে তার পাঠোদ্ধারের জন্য সিলের ছবি তিনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে সিলটির সময়কাল এবং তাতে লিপিবদ্ধ বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া সম্ভব।

মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থান গড়ের জাহাজঘাটা থেকে দক্ষিণে এবং পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে বৈরাগী ভিটায় খনন কাজ চলছে। এখানে খনন কাজ আরও এক মাস চলবে। সেই হিসাবে এখন প্রায় প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে খনন কাজ।  

খনন কাজ শেষে এ স্থানটি দর্শনার্থীদের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।