সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে অসংখ্য শিক্ষার্থী দূরের জেলা থেকে ঢাকায় আসেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাসে একবারের জন্য হলেও দেখা করতে তারা রাজধানী ছাড়েন।
পায়েলের মামা ও মামলার বাদী গোলাম সারোয়ারদী বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ‘মা বাস ছেড়েছে। উত্তরে তার মা জানান— ঢাকায় পৌঁছানোর পর নামাজ পড়ে আমাকে ফোন দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে। পায়েলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার মায়ের শেষ কথোপকথন এটাই হয়েছিল। বাসকর্মীদের এ রকম নির্মম কর্মকাণ্ড কখনই মেনে নেওয়া যায় না। ’
তিনি বলেন, বাসটি যখন হোটেল আইরিশে বিরতি দিয়েছিল তখন পায়েল বাস থেকে নেমে টয়লেটে গিয়ে যাবতীয় কাজ শেষ করেছিল। এছাড়া ওই হোটেলে কফিও খেয়েছিল সে। বিরতি শেষে পায়েল বাসে উঠেছিল কিনা তা জানতে কাউন্টার থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে নিশ্চিত হই। এছাড়া পায়েলের দুই বন্ধুও এ বিষয়টি জানান।
পথিমধ্যে মহাসড়কের গজারিয়া অংশে পায়েল আবারও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নেমেছিল কিনা তা তাদের আশেপাশে থাকা এক যাত্রী নিশ্চিত করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, যে পায়েল দরজার সামনে গিয়ে সুপারভাইজরকে কিছু একটা বলেছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে পায়েলের ঘড়ি, টাকা সব পেয়েছি কিন্তু তার পরিহিত জুতো পাওয়া যায়নি বলেও জানান নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পায়েলের মামা গোলাম সারোয়ারদী।
মুন্সিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, হানিফ পরিবহনের কর্মীদের এরকম আচরণ অনেক আগে থেকেই। পায়েলের ঘটনার আগেও তারা এ রকম অমানবিক কর্মকাণ্ড দায় এড়াতে করে থাকেন।
বুধবার (১৮ জুলাই) ভোরে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছান পায়েল। এরপর শনিবার (২১ জুলাই) রাতে হানিফ পরিবহনের বাসে দুই বন্ধুর সঙ্গে পায়েলও ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর থেকে পায়েল নিখোঁজ ছিল। রোববার (২২ জুলাই) সাধারণ ডাইরি (জিডি) করলে সোমবার (২৩ জুলাই) সকালের দিকে উপজেলার ভাটেরচর এলাকার সেতুর নিচের খাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুপারভাইজর জনি জানান, শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে হানিফ পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-৯৬৮৭) শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে করে পায়েল ও তার দুই বন্ধু মহিউদ্দিন শান্ত (২২) ও হাকিমুর রহমান আদর (২২) চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
মহাসড়কের ভাটেরচর ব্রিজের কাছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গাড়ি থেকে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পায়েল। রাস্তায় তখন যানজট ছিলো। যান চলাচল কিছুটা শুরু হলে চালক জামাল হোসেন (৩৫) গাড়ি সামনে এগিয়ে যায়। এসময় পায়েল দৌড়ে গাড়িতে উঠতে গেলে চালক দরজা খুলে তাকে উঠানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ওই ছাত্র দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মুখে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যান।
সেই মুহূর্তে সুপারভাইজর জনি (৩৮), চালক জামাল হোসেন (৩৫), বাসের সহকারী (হেলপার) ফয়সাল হোসেন (৩০) পায়েলকে মৃত ভেবে ভাটেরচর ব্রিজ থেকে খালে ফেলে দেন। পায়েল বাস থেকে নামার সময় তার পাশে থাকা বন্ধু ঘুমিয়ে ছিলেন ও আরেকবন্ধু শেষের সিটে ঘুমিয়ে ছিলেন। এছাড়া ভোরের দিকে হওয়ায় বাস যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, খালে ফেলে দেওয়া পায়েল তখনো জীবিত ছিলো। কারণ তার পেটে প্রচুর পরিমাণ পানি ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
জিপি