শুক্রবার (২০ জুলাই) দুপুরে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, এত বিপুল পরিমাণ কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ায় খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে, কয়লার অভাবে চার/পাঁচদিনের মধ্যে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
জানা গেছে, উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৬ জুন থেকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগস্ট মাসের শেষে। এ সময়ের মধ্যে পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লার মজুদ রয়েছে বলে ইতোপুর্বে কয়েক দফা পিডিবিকে নিশ্চিত করে খনি কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ তিন/চারদিন আগে পিডিবিকে জানিয়ে দেয় খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আর বেশিদিন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা সরবরাহ কমিয়ে দেয়। বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৮শ’ থেকে ১ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। তা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে এবং উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪০ মেগাওয়াটে।
সূত্রমতে, খনি কর্তৃপক্ষের হিসেবে কোল ইয়ার্ডে কয়লা থাকার কথা প্রায় দেড় লাখ টন। কিন্তু বাস্তবে শুক্রবার (২০ জুলাই) পর্যন্ত ছিল মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা। এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস নেই।
খনির একটি সূত্র জানায়, খনি ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় পানির সঙ্গে মিশে, ডাস্ট হয়ে বাতাসে উড়াসহ বিভিন্নভাবে কয়লা বিনষ্ট হয়। কিন্তু উৎপাদন ঠিকাদার আন্ডারগ্রাউন্ডে যে পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করে কাগজে কলমে সেই হিসাব সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
এছাড়া ২০০৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে খনির কোল ইয়ার্ড কখনও খালি হয়নি। এর মাঝে আগুনে পুড়েও বিপুল পরিমাণ কয়লা বিনষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরে কোল ইয়ার্ডে বিপুল পরিমাণ কয়লার ঘাটতি ছিল। খনি কর্তৃপক্ষ এতদিন তা সমন্বয় করেনি এবং কোল ইয়ার্ড খালি না হওয়ায় এতদিন বিষয়টি ধরাও পড়েনি।
সূত্রমতে, কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার দারপ্রান্তে উপনিত হওয়ায় পেট্রোবাংলা ও খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলা এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদ অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয় এবং মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানী সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করে কেন কয়লা নেই এ বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই বলা যাবে কেন কয়লা মজুদ নেই।
তিনি আরও বলেন, পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৮
আরএ