ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন 

সাতক্ষীরা: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সাংবাদিক, নাগরিক, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।  

শুক্রবার (১৬ জুন) জেলা শহরের নিউ মার্কেট মোড়স্থ শহিদ স. ম আলাউদ্দীন চত্বরে সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য, সাতক্ষীরা টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও সাতক্ষীরা সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এই দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে নিউজ করাই কাল হলো সাংবাদিক নাদিমের। তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা যেমন গোটা সাংবাদিক সমাজকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে, তেমনি কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। অবিলম্বে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।  

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু, শামসুর রহমান কেবল, স. ম আলাউদ্দীনসহ সারাদেশে অসংখ্য সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হলেও তার বিচার হয় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন নিপীড়নের তালিকা দীর্ঘ করছে। এই তালিকায় যুক্ত হলো সাংবাদিক নাদিম।  

বক্তারা নাদিমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।  

মানববন্ধনে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক কালেরচিত্র সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবু আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাতক্ষীরা টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক  ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চ্যানেল আইয়ের আবুল কালাম আজাদ, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা গণফোরামের সভাপতি আলী নুর খান বাবুল, উদীচী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা শাখার সদস্য সচিব অ্যাড. মুনীর উদ্দীন, স্বদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা মহিলা পরিষদের সম্পাদক জোৎস্না দত্ত, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, সাতক্ষীরা সাংবাদিক কেন্দ্রের সমন্বায়ক ও এখন টিভির প্রতিনিধি আহসানুর রহমান রাজীব, বণিকবার্তার গোলাম সরোয়ার, দীপ্ত টিভির রঘুনাথ খাঁ, উন্নয়ন কর্মী জিএম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের খবরের আব্দুস সামাদ, খবরপত্রের রবিউল ইসলাম, দৈনিক তথ্যের সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন, প্রজন্ম একাত্তরের ফারুক রহমান, বাংলাট্রিবিউনের আসাদুজ্জামান মধু, ঢাকামেইলের গাজী ফরহাদ, নাগরিক কমিটির জহুরুল কবীর, সূর্যের আলোর মুনসুর রহমান, সাংবাদিক বায়েজিদ হাসান প্রমুখ।  

গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ রাতে তার নিজবাড়ি গরুহাটিতে নেওয়া হয়।  শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের জামালপুর করেসপন্ডেন্ট ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।

বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নিউজ করার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নাদিমের স্বজনরা।

মৃত্যুর আগে নাদিম নিজেও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।  

এর আগে, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ চার সাংবাদিকের নামে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ৩০ মে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।

নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এরও আগে গত ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হয়েছিলেন নাদিম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থকরা এ হামলা করেন। গত ১০ জানুয়ারি ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের গ্রুপের লোক বলেও নাদিমের পরিবারের অভিযোগ।

আরও পড়ুন
নাদিম হত্যাকাণ্ড

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসআরএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।