ঢাকা, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ মে ২০২৫, ২৭ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

দেশি-বিদেশি আমে জমজমাট বান্দরবানের বাজার

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৪, মে ২৫, ২০২৫
দেশি-বিদেশি আমে জমজমাট বান্দরবানের বাজার

বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে দিন দিন বাড়ছে আমের আবাদ। এক সময় বান্দরবানে শুধু দেশি আমের চাষ হলেও এখন বিভিন্ন উপজেলায় হচ্ছে বিদেশি জাতের আম।

 

এদিকে সুস্বাদু আর নানা ধরনের আম দেখে মুগ্ধ চাষিরা ও ক্রেতারা।

বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি আমে জমজমাট হয়ে উঠেছে বান্দরবানের বাজার।
 
বান্দরবান বাজারের বিভিন্ন স্থানে এখন বিক্রি হচ্ছে দেশি জাতের রুপালি (আম্রপালি), রাংগোয়াই আর বিদেশি জাতের আম মিয়াজাকি, কাটিমন, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, ব্যানানা, রেড পালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম।
জেলা সদরের বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আকার ভেদে রুপালি আর রাংগোয়াই ৬০-১০০ টাকা কেজি দরে আর বিদেশি জাতের আম রেড পালমার ৩০০ টাকা, ব্যানানা ২০০ টাকা, কিউজাই ১৮০ টাকা, রেডকুইন ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা সদরের পাইকারি ফল ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে এখন জন্মাচ্ছে টসটসে দেশি-বিদেশি আম। এ বছর আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, ড্রাগন ফলের ভালো ফলন হয়েছে বান্দরবানে। স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে এখন তাল, লিচু, আনারস, কাঁঠালের পাশাপাশি প্রচুর দেশি-বিদেশি আম পাওয়া যাচ্ছে আর দামও ক্রেতার হাতের নাগালে।  

তিনি বাংলানিউজকে আরও জানান, এখানে উৎপাদিত ফলগুলো ফরমালিনমুক্ত আর তাই বান্দরবান বাজারের পাশাপাশি বান্দরবানের উৎপাদিত ফলগুলো কেরানীহাট, আমিরাবাদ, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে সহজেই।  

তিনি আরও জানান, এক সময় বান্দরবানে শুধু দেশি আম পাওয়া যেত, কিন্তু এখন বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হচ্ছে।  

বান্দরবান বাজারের আম বিক্রেতা মো. আফনানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বান্দরবানের রুমা উপজেলা ও চিম্বুক পাহাড় থেকে প্রচুর বিদেশি আম পাইকারি দরে কিনে জেলা সদরে নিয়ে এসেছি। বান্দরবান জেলা সদরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি সেই আম।  

তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের আম খুবই স্বাদ আর ফরমালিনমুক্ত। এজন্য স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি পর্যটকরাও বেশি পছন্দ করেন। ফলের মৌসুমে আমরা ভালো লাভ করতে পারি।

বাজারে আম কিনতে আসা মো. জয়নাল বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানের বাজারে বিভিন্ন মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম।  

তিনি আরও বলেন, এখন বিভিন্ন মৌসুমি ফল বান্দরবানে পাওয়া যাচ্ছে। এ মধ্যে বিদেশি নানাজাতের আমের চাহিদা বাড়ছে। বান্দরবানের ফলগুলো এমনিতেই পুষ্টিতে ভরা। এতে পোকা কম, তাই এখন বাজার থেকে আম কিনছি, আর দামও হাতের নাগালে।

বিদেশি জাতের আম কিনেছেন মো. শাহাবউদ্দিন নামে এক ক্রেতা। তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ের প্রতিটি ফলই অনেক মিষ্টি হয়। বর্তমানে পাহাড়ে বিদেশি জাতের আম উৎপাদন হচ্ছে। দামও কম। সহজে কিনতে পেরে ভালো লাগছে। ব্যানানা, রেড পালমারসহ বিদেশি কয়েকটি জাতের আম কিনেছি। এসব আমের স্বাদ অতুলনীয়।  

তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে যদি পাহাড়ে আরও সহযোগিতা বাড়ানো হয়, তাহলে বান্দরবান থেকে প্রচুর দেশি-বিদেশি আম দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।  

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের সাত উপজেলায় প্রচুর ফল উৎপাদন হয়। জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাশাপাশি জেলা সদরের চিম্বুক এলাকায় প্রচুর আম উৎপাদন হয়। পাহাড়ে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি আমসহ বিভিন্ন ফলের চাহিদা সারা দেশেই রয়েছে।  

এদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে কৃষির উন্নয়নে চাষিদের বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বান্দরবানে এখন ফল উৎপাদন বাড়ছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপপরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ্ নেয়াজ বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানে এ মৌসুমে প্রচুর আম উৎপাদন হয় আর দেশি জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আম চাষ করে বান্দরবানের চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন।  

তিনি আরও জানান, বান্দরবানে ৬০ শতাংশ দেশি জাতের রাংগোয়াই আম, ৩০ শতাংশ আম্রপালি ও অন্যান্য জাতের ১০ শতাংশ বিদেশি আমের আবাদ হয়ে থাকে। আর আম বিক্রি করেই এলাকায় অনেক চাষির সংসার চলছে।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।