ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘যেকোনো কিছুর মূল্যে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
‘যেকোনো কিছুর মূল্যে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন’ মো. রুকনুজ্জামান রাজীব

ময়মনসিংহ: ইউক্রেনের জলসীমায় আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলার পর অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার ২৮ নাবিকের একজন ময়মনসিংহের মো. রুকনুজ্জামান রাজীব (২৬)। রাজীবকে ফিরে পেতে আহাজারি করছেন তার মা কোহিনুর বেগম।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ২৮ নাবিক ও নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহসহ বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজীব ময়মনসিংহ নগরীর কাঁচিঝুলি এলাকার জোবেদ আলী রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলির ছেলে।  

মা কোহিনুর বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত চার মাস আগে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে থার্ড অফিসার হিসেবে রাজীব যোগ দেন। তার সিডিসি নম্বর ৯৬৩৭। ৬ অক্টোবর ২০২১ রাজীবের স্ত্রীসহ দুই বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।

কোহিনুর বেগম আহাজারি করে বলেন, সরকারের কাছে একটাই আবেদন, যেকোনো কিছুর মূল্যে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।  

রুকনুজ্জামান রাজিবের স্ত্রী সিলভিয়া জাহান বলেন, একমাত্র সন্তানের জন্য হলেও আমার স্বামীকে ফেরত চাই।  

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ২৮ জীবিত নাবিককে উপকূলে বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। টাগবোটের সাহায্যে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পোল্যান্ডের দিকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টায় বিএসসির নির্বাহী পরিচালক ড. পীযূষ দত্ত বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বাংলার সমৃদ্ধি থেকে ২৮ নাবিক ও নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহসহ বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নাবিকদের জাহাজ থেকে নিরাপদে নামানো সম্ভব হয়েছে।  

যাদের উদ্ধার করা হলো
জিএম নুর ই আলম। মাস্টার। সিডিসি নম্বর ৪৭৪২। ১০ মার্চ ২০২১ থেকে তিনি সেই জাহাজে কর্মরত।  
মো. মনসুরুল আমিন। এডিশনাল মাস্টার। সিডিসি ৪২৭১। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।  
সেলিম মিয়া। এসিও। সিডিসি নম্বর ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
রামাকৃঞ্চ বিশ্বাস। সেকেন্ড অফিসার। সিডিসি নম্বর ৬৩৭০। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি  কর্মরত।  
মো. রুকনুজ্জামান রাজিব। থার্ড অফিসার। সিডিসি নম্বর ৯৬৩৭। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি। ডিসি-১। সিডিসি নম্বার ১০৬৯৮। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
ফয়সাল আহমেদ সেতু। ডিসি-২। সিডিসি নম্বর ১০৮৭৬। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।  
মোহাম্মদ ওমর ফারুক। চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি নম্বার ৪১০৪। ১৬ মার্চ ২০২১ থেকে কর্মরত।
সৈয়দ আসিফুল ইসলাম। এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি নম্বার ৬৩৪৮। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
রবিউল আউয়াল। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি ৬৬৩২। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
সালমান সারোয়ার সামি। চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি ৯৪২১। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
ফারজানা ইসলাম মৌ। ইসি-১। সিডিসি ১০৮১৪। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. শেখ সাদি। ইসি-২। সিডিসি ১০৮৯৬। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. মাসুদুর রহমান। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি ৫৬৯০। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।  
মো. জামাল হোসাইন। বসুন। বিএসসি টি ১১২০। ১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. হানিফ। এবি-১।  সিডিসি ১৩৮১৩। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. আমিনুর ইসলাম। এবি-২। সিডিসি ৩২২৩৬। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. মহিন উদ্দিন। এবি-৩। বিএসসি ১১১২। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।  
হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব। ওএস-১। টি ৩৩৮৮৫। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
সাজজাদ ইবনে আলম। ওএস-২। টি ৩৩৭৬১। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।  
নাজমুল উদ্দিন। ফিটার। টি ৩৩৭২৪। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ইলেকট্রিশিয়ান। বিএসসি ১১২০। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
সারোয়ার হোসাইন। অয়েলার-১। বিএসসি ১১১৫। ৬ অক্টোবর ২০২১ সাল থেকে কর্মরত।
মো. মাসুম বিল্লাহ। অয়েলার-২। বিএসসি ৩২৯২৬। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মোহাম্মদ হোসাইন। অয়েলার-৩। সিও ৭৫১৪। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. আতিকুর রহমান। ফায়ারম্যান। টি ৩৪২১৮। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।  
মো. শফিকুর রহমান। চিফ কুক। টি ২৯৬১২। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো.  সাইফ উদ্দিন। জিএস। টি ১৪২০৮। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।   

বুধবার (২ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়) বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই জাহাজের নাবিক সালমান সামি। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।

বিএসসির জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যাওয়ায় ২৯ নাবিকসহ সেখানেই আটকা পড়ে জাহাজটি। ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে তাদের ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল।

>>> ইউক্রেনে হামলার শিকার জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার
>>> ইউক্রেনে হামলার শিকার জাহাজের নাবিকদের উপকূলে আনার চেষ্টা 
>>> ‘আমার পড়ার খরচ এখন কে দেবে’

>>> ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নিহত ১
>>> ইউক্রেনে নিহত নাবিকের বাড়িতে শোকের মাতম
>>> নাবিকের ফোনে ছিলেন ছোট ভাই, রকেট এসে কেড়ে নিল প্রাণ!
>>> ‘নাবিক হাদিসুরের মরদেহ জাহাজেই সংরক্ষণ করা হয়েছে’
>>> ‘আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে’

>>> বাঁচার জন্য স্বজনদের কাছে নাবিকদের আকুতি

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।