ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
‘আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে’ ডান থেকে দ্বিতীয় জন নিহত নাবিকের মা, ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের মা আমেনা বেগম। কথা বলতেই সে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

বলতে গিয়েও কিছুই বলতে পারছে না। স্মৃতি হিসেবে ছেলের কয়েকটি মেডেল হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কান্না করেছেন আর বলেছেন, ‘আমার ছেলের লাশটা তোরা আইন্না দে’।  

নিহত হাদিসুর রহমান আরিফ (২৮) বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে হাদিসুর দ্বিতীয়।

বুধবার (০৩ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন হাদিসুর। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

স্বজনরা আরও জানান, হাদিসুর সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন ৩ মাস আগে। তবে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল তার। জানিয়েছিলেন, আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন।

বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বাংলানিউজকে বলেন, হাদিস আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী ছাত্র ছিল। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল হাদিসুর। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল ছয়মাস আগে।

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গোলার আঘাত হানার সময় ভাইয়া বাইরে এসে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে কথার এক পর্যায় হঠাৎ করে একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দে কিছুই শুনতে পাইনি, ভাইয়ার সঙ্গে আর কথাও হয়নি।

হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছেলের নিহত হওয়ার খবরে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরাও। সকাল থেকেই হাদিসুরের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে মানুষের। তার মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি হিসেবে ছেলের কয়েকটি মেডেল গলায় জড়িয়ে কান্না করছিলেন। বলেন, ‘বাড়িতে এসে ছেলের ঘরের কাজ ধরার কথা ছিল, ছিল বিয়ের কথাও। এখন সব কিছুই শেষ। আমি সন্তানের লাশ দেখতে চাই। ’
 
হাদীসের চাচাতো ভাই জসিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, এবারে বাড়ি আসলে হাদিসের বিয়ে করার কথা ছিল। এজন্য পটুয়াখালীতে তার জন্য মেয়েও দেখা হয়েছিল। কথা ছিল আসার পর বিয়ের সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। তা আর হলো কই?

জানা যায়, বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফ্রেরুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি.এম নুর-ই-আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটল। সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।

>>> ‘নাবিক হাদিসুরের মরদেহ জাহাজেই সংরক্ষণ করা হয়েছে’
>>> ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নিহত ১
>>> নাবিকের ফোনে ছিলেন ছোট ভাই, রকেট এসে কেড়ে নিল প্রাণ!
>>> ইউক্রেনে নিহত নাবিকের বাড়িতে শোকের মাতম

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।