ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিঙ্কের (ইউটিএল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে ‘না জানিয়ে’ সাদা দলের ৫ শিক্ষককে পদায়নের ঘটনা ঘটেছে। এসব শিক্ষক কমিটির বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ঢাবি চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ইউটিএল। কমিটিতে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. যুবায়ের মুহাম্মদ এহসানুল হককে আহ্বায়ক এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোতালেব হোসেনকে সদস্য সচিব পদ দেওয়া হয়।
এ কমিটিতে সদস্য পদ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা বেগম এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ কমিটির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
বিকেলে ইউটিএলের কমিটির ঘোষণার পরপরই তারা সাদা দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান খানের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন।
লিখিত চিঠিতে নুরুল ইসলাম বলেছেন, হঠাৎ একটি তালিকায় দেখলাম (যেখানে আমাকে) ইউটিএল নামক একটি সংগঠনের আহ্বায়ক সদস্য ( করা হয়েছে)। কিন্তু আমি এই বিষয়ে অবহিত নই। তাই এ অবস্থায় আমি আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। একই কথা বলেছেন অধ্যাপক সালমা বেগম।
সাদা দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান জানান, এরকম আরও তিনজন কমিটির বিষয়ে অবহিত নয় বলে এরই মধ্যে তাকে জানিয়েছেন। তারমধ্যে দুইজন মৌখিকভাবে এবং তিনজন লিখিতভাবে বলেছেন।
এ বছরের ২৬ জানুযারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিঙ্ক-ইউটিএল নামে এই সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এর আহ্বায়ক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস এবং সদস্য সচিব হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বিলাল হোসেন।
এ সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামীর শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। সাদা দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, আতাউর রহমান বিশ্বাস নিজেও জামায়াতের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় নেতা। দলটি জামায়াতের, তবুও তারা অস্বীকার করছে। এটি তো মুনাফেকি।
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, সংগঠন করার অধিকার থেকে জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা ইউটিএলের কমিটি করতেই পারেন। আমরা স্বাগত জানাই। তবে সম্মতি না নিয়ে কোনো ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা রাখার এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত।
তবে ইউটিএলের নেতারা নিজেদের জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, জামায়াতে সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। এদিকে সাদা দলের সঙ্গেও কোনো বিরোধ নেই।
তারা বলছেন, তারা একইসঙ্গে সাদা দলেও আছেন এবং ইউটিএলেও আছেন। এটি একটি ভিন্নধর্মী সংগঠন, যেখানে বিএনপি-জামায়াতসহ ভিন্ন দলের শিক্ষকরা আছেন। সারা দেশে এ সংগঠন কমিটি করবে।
ইউটিএলের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, ইউটিএলের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই।
সাদা দলের পাঁচজনকে অনুমতি ছাড়া কমিটিতে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো পরিষ্কার জবাব দিতে পারেননি ইউটিএলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আতাউর রহমান বিশ্বাস। তিনি বলেন, (যাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে) ওনারা ইউটিএলে আছে। তাছাড়া ওনারা কী লিখেছে, কোথায় লিখেছে, কেন লিখেছে, তা জানি না। সাদা দলের কাছে লিখলে তারা সাদা দলের সঙ্গে বুঝবে।
তিনি বলেন, ইউটিএল আলাদা, সাদা দল আলাদা। ইউটিএলের সঙ্গে তো সাদা দলের কোনো বিরোধ নেই। সাদা দল বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থিদের দল। আমি নিজেও সাদা দল করি। ইউটিএল একটা ইউনিভার্সিটি নিয়ে সংগঠন না।
শিক্ষকরা থাকতে চাননি, তাও রাখা হলো কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকতে চাননি, অথবা অন্য কোনোভাবে থাকতে চেয়েছিলেন। ওনারা ইউটিএলে আছে।
একইসঙ্গে কীভাবে দুই দলে আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা তো সাদা দলে আছেন, আমরাও সাদা দলে আছি। এ বিষয়টি বুঝলেই আপনার হবে। সাদা দল একধরনের, ইউটিএল আরেকধরনের। ওনারা আমাদের সঙ্গে আছে। সাদা দলের সঙ্গেও আছে।
নিজেদের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এবছরের ডাকসু নির্বাচনের পর সাদা দলের বিবৃতির বিপরীতে অবস্থান প্রকাশ করে ইউটিএল। সাদা দল নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ আনলেও বড় ধরনের কোনো অসঙ্গতি নির্বাচনে হয়নি বলে জানায় ইউটিএল। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করে তারা।
ইউটিএল নিজেদের বিবৃতি উল্লেখ করে, ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্বে থাকার পরও সাদা দল নিজেদের প্যাডে নির্বাচনকে ‘অনিয়ম ও জালিয়াতির’ উল্লেখ করা দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়ে।
ইউটিএলের ঢাবি কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছেন
ইউটিএলের ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আ খ ম ইউনুস ও ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এইচ এম মোশাররফ হোসেন পদ পেয়েছেন। যুগ্ম সদস্য সচিব পদে বিশ্বধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু সায়েম, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুক (দপ্তর বিষয়ক) পদ পেয়েছেন। এছাড়াও কোষাধ্যক্ষ পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
এছাড়া সদস্য পদে ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোশাররু হোসাইন ভূঁইয়া, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে হোসাইন ও ড. মো. আবদুল লতিফ, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল কাদের, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. কুতুবুল ইসলাম নোমানী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা বেগম ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব কায়সার, আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরে আলম ও ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম, ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম সোহাগ, দর্শন বিভাগের প্রভাষক ড. হামিদুর রহমান এবং বিশ্বধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক ড. মেহের আফরোজ লুতফা স্থান পেয়েছেন।
এফএইচ/জেএইচ