ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

সিকান্দার রাজা : পাকিস্তান থেকে স্কটল্যান্ড হয়ে জিম্বাবুয়ের ‘গর্বিত’ ক্রিকেটার

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২২
সিকান্দার রাজা : পাকিস্তান থেকে স্কটল্যান্ড হয়ে জিম্বাবুয়ের ‘গর্বিত’ ক্রিকেটার

সিকান্দার রাজা হয়ে উঠছেন অদম্য। এই বিশ্বকাপে পৃথিবীর সব ক্রিকেটপ্রেমীর মনের দরজায় কড়া নেড়েছেন তিনি।

দলকে তুলেছেন সুপার টুয়েলভে। এই পর্বেও করেছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। পাকিস্তানকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে জাগিয়েছিল সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনাও।  

যদিও নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে তাদের সব আশা গেছে শেষ হয়ে। হারের ম্যাচটিতেও ২৪ বলে ৪০ রান করে সেরা পারফরমার ছিলেন রাজা। পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।  

বিবিসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই ম্যাচের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজা বলছিলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই-বোনরা একজন কাঁদছে, অন্যজন হাসছে; এমন ভিডিও পেয়েছিলাম আমি। কারণ একজন আমাকে ও অন্যজন পাকিস্তানকে সমর্থন করছিল। ’

সিকান্দার রাজার জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। চেয়েছিলেন বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে। কিন্তু চোখের পরীক্ষায় ফেল করে সেটা পারেননি তিনি। এরপরের পথটাও তার ক্রিকেটের সঙ্গে ছিল না।  

২০০০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসকোতে পাড়ি জমান সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পড়াশোনা করতে। কোডিংও শিখেছিলেন পুরোপুরি। এখনও কি মনে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজার উত্তর ‘হয়তো সি++ কিন্তু জাভা পারি না। আমি স্নাতক শেষ করেছিলাম তবে মনে হয় না কোন ভবিষ্যৎ ছিল ওখানে। ’

ক্রিকেটার হিসেবে রাজার বেড় উঠা মূলত স্কটল্যান্ডেই। তার মতে মানুষ হিসেবেও আরও ভালোভাবে গড়ে উঠেছেন সেখানে, ‘কিছু নির্দিষ্ট বিনয়েরও অভাব ছিল আমার মধ্যে। এগুলো আমি স্কটল্যান্ডে শিখেছি। ’

পাকিস্তানে মজা করেই ক্রিকেট খেলতেন রাজা। স্কটল্যান্ডে শুরু করলেন ক্লাব ক্রিকেট খেলার। তখন অবশ্য পেস বোলিংয়ের সঙ্গে মিডল অর্ডার ব্যাটারের ভূমিকায় দেখা যেত তাকে। পড়াশোনার ফাঁকেই তখন কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন রাজা। বিভিন্ন ক্লাবে খেলার পর এক পর্যায়ে হন পেশাদার।

স্কটল্যান্ডের বৃষ্টির আবহাওয়ায় খেলার ওই অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন রাজা, ‘প্রথম কয়েক বছর আমরা ডান্ডি ও আবেরদিনে ভ্রমণ করতাম। অবশ্যই আপনি বৃষ্টির আবহাওয়ার মধ্যে প্রতিটি ম্যাচ খেলছেন কিন্তু আমরা তখন খুব তরুণ ও রোমাঞ্চিত ছিলাম। একটা ম্যাচ খেলতে পারলেই খুশি থাকতাম। ’

‘একটা ক্লাবে খেলতাম যেখানে সবসময় বাতাস থাকতো, প্রচণ্ড ঠাণ্ডাও। সারাক্ষণ বিমান উঠা-নামা করতো। কিন্তু আমরা খেলার জন্যই রোমাঞ্চিত থাকতাম। ’

কয়েকদিন আগে স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটকে আকড়ে ধরেছিল বর্ণবাদের অভিযোগ। এ নিয়ে বিবিসি স্পোর্টস জানতে চাইলে রাজা জবাব দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি খুশি হয়েছি এই প্রশ্ন করায়। আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে খুবই খুশি, শুধু ব্যক্তিগতভাবেই না, মানুষ হিসেবেও। ’

‘রোজার সময় ক্লাবগুলো খুব সম্মান দেখাতো। তুমি জোরে দৌড়াচ্ছো না কেন বল ধরতে, এমন চিৎকার কেউ করতো না। নামাজের সময় তারা ড্রেসিং রুমে চুপচাপ থাকতো। ’

যদিও বর্ণবাদের অভিযোগ উড়িয়ে দেননি রাজা, ‘আমার মনে হয় মাইকেল হোল্ডিং বলেছিল, যদি আপনি নিজেকে শিক্ষিত করতে না পারেন; তাহলে সমস্যা নির্মূল করতে পারবেন না। তাদের নির্বাসনে পাঠানোর চেয়ে শিক্ষিত করা ভালো। বর্ণবাদের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া না গেলে এই সমস্যাগুলো শেষ হবে না। ’

‘আমাদের এমন একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে যেখানে কারো সঙ্গে কারো কোন সমস্যা থাকবে না। আমরা স্কটল্যান্ডে পরিবারের মতো থেকেছি। দেশটি আমাকে সবকিছু দিয়েছে। ’

স্কটল্যান্ডের ক্লাব সিস্টেম থেকে তৈরি হওয়া ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন রাজা। যদিও তার প্রথম শ্রেণির অভিষেক হয়েছিল জিম্বাবুয়ে, এখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলেছেন নিয়মিত। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের হয়ে। পরের বছর নিজের জন্মভূমি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন প্রথম টেস্ট।

রাজার পরিচয় আসলে কী? তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখনও গর্বিত পাকিস্তানী। জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানের সৌন্দর্য হচ্ছে তারা আমার পরিচয়কে কেড়ে নেয়নি। পাকিস্তান স্বীকার করে আমি জিম্বাবুয়ের প্রোডাক্ট। তারা আমাকে তৈরি করতে টাকা ও সময় ব্যয় করেছে। ’

‘জিম্বাবুয়ের মানুষও এটাকে সম্মান করে আমার জন্ম পাকিস্তানে। এখনও গর্বিত পাকিস্তানী ও একই সঙ্গে গর্বিত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার। ’

বাংলাদেশ সময় : ২১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২২
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।