ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

ছাত্ররাজনীতিতে সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩৭, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
ছাত্ররাজনীতিতে সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ!

ঢাকা: ব্যাপক ভোটারের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন প্রত্যক্ষ করলো দেশবাসী। নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছে।

পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বাদে এই নির্বাচন এমন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় কেউ কেউ বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল ছাত্রলীগ। ভোটাররা বার্তা দিলেন, ভয়হীন পরিবেশ পেলে এমনই উৎসব নিয়ে ভোট দিতে আসবেন তারা, সেখানে ছাত্রলীগের মতো কোনো সংগঠনের না থাকা বিষয় হবে না।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাতে গণনার পাশাপাশি ফল ঘোষণা হতে থাকে। নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবের আমেজ। সারা দেশের মানুষের আগ্রহ-উৎসাহেরও কেন্দ্রে ছিল ডাকসু নির্বাচন। এই জমজমাট নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন সমর্থিত প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা।

গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়নসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে গত বছর নিষিদ্ধ হয়েছে। সেজন্য তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে।

অথচ শিক্ষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ডাকসু নির্বাচনেও এ সংগঠনটির প্রার্থীরা কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাধীনতার আগে একাধিকবার এবং স্বাধীনতার পর একবার ছাত্রলীগ ডাকসুতে বেশ ভালো ফলাফল করে। ডাকসু নির্বাচনে এবারই প্রথম এমন হলো, যেখানে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ছিল না। তাদের অংশগ্রহণ না থাকলেও এবারের ডাকসু নির্বাচনে শতকরা ৭৮ ভাগ ভোটার উপস্থিতি উপস্থিত হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনটিকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে পরদিন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। রাতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ৷

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

সরকারের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র–ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছেন এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছেন। এ ছাড়া সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’–এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২–এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষিদ্ধ থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রলীগের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। কিন্তু ছাত্রলীগ ছাড়াই এই নির্বাচনে এত বিপুল সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ও ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, ছাত্রলীগ সত্যি সত্যি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। কারণ এদেশের ছাত্র রাজনীতিতে ডাকসু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। শুধু শিক্ষার্থীদের সংসদ নয়, ডাকসু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করে থাকে। সেই ডাকসুতে ছাত্রলীগ ছাড়া নির্বাচনে এত বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভোট উৎসব ছাত্রলীগের অপ্রাসঙ্গিকতাই প্রমাণ হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন।

বুধবার জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বভাগে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থান-পূর্ব বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাংলাদেশের মাটিতে দীর্ঘ দেড় দশক কোনো সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ ছিল না—অর্থাৎ ছাত্র-জনতার ভোটাধিকার প্রয়োগের লড়াই দীর্ঘদিনের। ছাত্র-জনতার দীর্ঘদিনের নানা ক্ষোভ ও বঞ্চনার মধ্যে অন্যতম ছিল ভোটাধিকার আদায়ের দাবি, সেসব নানা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল। সুতরাং, ডাকসু-২০২৫ সেই অভ্যুত্থানেরই আকাঙ্ক্ষা ও অর্জনের ফসল। তারই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে জাকসু, রাকসুসহ দেশের অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্বাস করে। ’

ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, যেহেতু বহুদিন পর নির্বাচন হয়েছে, কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। যারা বিজয়ী হয়েছে, তাদের অভিনন্দন জানাই। এটা গণতন্ত্রের রীতি। গণতন্ত্রের রীতি হবে সবাইকে অভিনন্দন জানানো।

এনডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।