ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘুম ভাঙে ‘আগুন আগুন’ ডাকে

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৭
ঘুম ভাঙে ‘আগুন আগুন’ ডাকে আগুনে পুড়ে ছাই সদরঘাটের মাইল্লার বিল বস্তি। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: রোববার রাত একটার কিছু পরের সময়। দিনভর ক্লান্তি শেষে পরম শান্তিতে তখন ঘুমাচ্ছিল খেটে খাওয়া মানুষগুলো। সারাদিনের কোলাহল থেমে মাইল্লার বিল বস্তিজুড়েই রাজ্যের নীরবতা। সেই নিস্তব্ধতা ভাঙল ‘আগুন, আগুন’ ডাকে।

শ্যামলা বেগম। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর চোখ জলে টলমল।

রাত থেকেই কাঁদতে কাঁদতে বয়োজ্যেষ্ঠের সমস্ত শক্তিও যেনো ফুরিয়ে গেছে।

ছেলে, ছেলের বউ আর দুই নাতনি নিয়ে থাকতেন বস্তির দক্ষিণ দিকের একটি বাসায়।

সোমবার বেলা ১১টায় কথা হয় তার সঙ্গে।

কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শ্যামলা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই আগুন আগুন ডাক। দ্রুত নাতনিদের নিয়ে কোনোমতে বাইরে চলে যাই। কিছু নিয়ে বের হতে পারিনি। অনেক দিনের কষ্টের টাকায় কেনা সব শেষ।

সেই আগুন মুহূর্তেই পুড়িয়ে দিল বস্তিতে থাকা প্রায় হাজারখানেক বাসা, ১৫টি দোকানসহ সবকিছুই। আগুনে সর্বস্ব হারানো মানুষদের অভিযোগ কেউ উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে এই আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

এই বস্তিতে থাকা সবচেয়ে বড় মুদির দোকানটি ছিল হারুন ও পারভিন দম্পত্তির। নানা রকম জিনিসে ঠাসা ছিল ১০ বাই ৬ হাতের দোকানটি। আগুনে পুড়ে ছাই সদরঘাটের মাইল্লার বিল বস্তি।

সোমবার বেলা ১১টার দিকেও তার দোকানে পুড়ে যাওয়া ফ্রিজের যন্ত্রাংশ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তিনি।

জিজ্ঞেস করতেই হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে বলেন, এটিই আমার দোকান। দোকানে যেসব জিনিসপত্র ছিল তা বিক্রি করলেও আমরা সারাজীবন চলতে পারতাম। এত দামি আর ভারি জিনিস ছিল-যার কারণে পুরো বস্তি দশ মিনিটে পুড়ে গেলেও আমার দোকানের জিনিসপত্র পুড়তেই লেগেছে ১৪ ঘণ্টা। আমার আর কিছুই রইল না। সব শেষ হয়ে গেল।

বস্তিবাসী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বস্তিতে ২৬ জন মালিকের অধীনে প্রায় এক হাজার ছোট বাসা ছিল। এছাড়া ১৫টি দোকানও ছিল এই বস্তিতে। সবমিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ থাকতো এই বস্তিতে।

অবশ্য সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো বাসার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবকিছু পুড়ে ছাই।

ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ কর‍ছিল পুলিশ। পাশাপাশি ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছিল। আগুনে পুড়ে ছাই সদরঘাটের মাইল্লার বিল বস্তি

ফায়ার সার্ভিসের ডিস্ট্রিক্ট ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই বস্তিটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ভেতরে প্রবেশের রাস্তাগুলো খুবই সরু। একজনের বেশি মানুষ হাঁটা যায় না। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। আগুন যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আমরা চারপাশে ঘিরে একযোগে কাজ করেছি। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো। খুব কম সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। না হলে আরও শত শত কোটি টাকার ক্ষতি ও জীবনহানির শংকা ছিল।

বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে আমরা তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করবো। মঙ্গলবার থেকে কমিটি তদন্ত শুরু করে দেবে।

ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা ও আগুনের উৎস নির্ধারণে কাজ করছিলেন সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আকতার।

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আগুনের সূত্রপাতের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।