বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর মাত্র তিন মাস আগে পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরের রাস্তায় অনুশীলন করছিলেন মুহাম্মদ দোয়েদার। খেলাধুলার মতো সুবিধা নেই, নেই আধুনিক প্রযুক্তি।
জাপানের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গত সপ্তাহে তিনি সেই স্বপ্ন পূরণও করলেন। ৮০০ মিটার হিটে ১:৫৩.৬৩ মিনিট সময় নিয়ে দৌড় শেষ করলেন শেষের দিকেই, কিন্তু তবুও তিনি গর্বিত, কারণ একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে তুলে ধরতে পেরেছেন।
দৌড় শেষে হাঁপাতে হাঁপাতে দোয়েদার বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষদের আমি দুঃখিত বলছি। আমি জানি আমি আরও ভালো করতে পারি। মাত্র দুই ল্যাপ—আমি জানি পারব। ’
ইসরায়েলের দমন-পীড়নে এ পর্যন্ত ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে দোয়েদারের কণ্ঠ কেঁপে উঠল, ‘ফিলিস্তিনের শিশুরাও স্বপ্ন দেখে। আমাদের চোখ আছে, হাত আছে, পেশি আছে। আমাদেরও অধিকার আছে। ’
দোয়েদার জানান, তিনি জানেন তার শরীর ১:৪৬ মিনিট সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করতে সক্ষম। দুই মাস আগে জার্মানিতে প্রথমবার কৃত্রিম ট্র্যাকে প্রশিক্ষণ করেছেন। তার লক্ষ্য ফিলিস্তিনের জন্য পদক জেতা।
‘আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে, ফিলিস্তিনের জন্য একটি পদক আনতে হবে,’ তিনি বলেন। ‘এটা খুব কঠিন, তবে আমার হাতে এখনও দুই-তিন বছর আছে। ’
আগামী নভেম্বর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে নামবেন দোয়েদার। তার আগে কিছুদিন জেরিকোতে পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন, পরে আবার জার্মানিতে যাবেন প্রশিক্ষণে।
‘আমি কয়েক বছরের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পারি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনেই ফিরব। এটাই আমার দেশ, আমার শহর,’ তিনি বলেন।
১০ বছর বয়স থেকে দৌড়ানো শুরু দোয়েদারের, অনুপ্রেরণা ছিলেন তার বড় বোন। শারীরিক শিক্ষায় ডিগ্রি শেষ করেছেন আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
‘আমার প্রয়াত বাবা আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল আমি চ্যাম্পিয়ন হব। ভালোবাসি বাবা, ভালোবাসি মা,’ বললেন দোয়েদার হাসিমুখে।
দৌড়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই জাতিসংঘ গাজায় গণহত্যা ঘোষণার কথা জানিয়েছিল। সেখানেই সাংবাদিকদের সামনে দোয়েদার বললেন, ‘গণহত্যা বন্ধ করুন, দয়া করে থামান। আমি কাঁদতে চাই কিন্তু পারছি না। আর টিভি বা ফোনে এসব দেখতে চাই না। ’
জাতীয় রেকর্ড ভাঙা, ব্যক্তিগত সেরা সময়ের নিচে নামা এবং ফিলিস্তিনের জন্য পদক জেতার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছেন তিনি।
‘আমি যতটুকু পারি ফিলিস্তিনকে দিতে চাই। এটিই আমার স্বপ্ন, এটিই আমার জীবন,’ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন মুহাম্মদ দোয়েদার।
এমএইচএম