ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

পূজাকে ঘিরে ভোটের রাজনীতিতে সরব বিএনপি-জামায়াত

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৫, অক্টোবর ২, ২০২৫
পূজাকে ঘিরে ভোটের রাজনীতিতে সরব বিএনপি-জামায়াত পূজাকে ঘিরে সরব বিএনপি- জামায়াত।

খুলনা: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। নানা ইস্যুতে কয়েকটি দল আন্দোলন নিয়ে রাজপথে থাকলেও ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।

নির্বাচনের আগে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। পূজাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে খুলনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলমীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

মন্দির-মণ্ডপে সৌহার্দ্যের বার্তা

মন্দির-মণ্ডপে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন এ দুইটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি আর্থিক অনুদান, মণ্ডপ পরিদর্শন, শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে মরিয়া তারা। লক্ষ্য নির্বাচনে ভোট টানা। অনেকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে ভোটও প্রার্থনা করেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা তোরণ নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বিএনপি

হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউর রহমান পাপুল ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।

খুলনা-২ (খুলনা সদর-সোনাডাঙ্গা-হরিণটানা ও লবণচরা থানা) আসনে সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন মন্দির-মণ্ডপে সোহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে ছুটে গেছেন। এসব নেতারা কেউ কেউ দিয়েছেন অনুদানও।

খালিশপুর, দৌলতপুর উপজেলা এবং আড়ংঘাটা ইউনিয়ন ও খানজাহান আলী থানার একাংশ নিয়ে খুলনা-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম শারদীয় দুর্গাপূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে ছুটে গেছেন।

রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে তৎপর ছিলেন।

খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সাবেক এমপি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আসগর লবি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহসভাপতি শফি মোহাম্মদ খান পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। দিয়েছেন আর্থিক অনুদানও। এর মধ্যে এগিয়ে ছিলেন আলী আসগর লবি।

কয়রা-পাইকগাছা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজীও নিজ এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মণ্ডপ পরিদর্শন, শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময় করে সময় পার করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জিয়াউর রহমান পাপুল বাংলানিউজকে বলেন, দাকোপ-বটিয়াঘাটা'র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়েছি। তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন, তাতে আমি ও দলের প্রতিটা নেতাকর্মী সমর্থক খুবই মুগ্ধ হয়েছি। বিগতে দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজেদের ভোট ব্যাংক মনে করতো। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী হিন্দুরা আমার কর্মকাণ্ডে আস্থাশীল হয়েছে তা দাকোপ বটিয়াঘাটার এরই মধ্যে শতাধিক পূজা মন্দির পরিদর্শনে জনসাধারণের ঢল প্রমাণ করে দিয়েছে।

সাবেক সংসদ সদস্য এবং খুলনা-৫ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রার্থী আলি আসগার লবি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ আমাকে অল্প সময়ে খুবই আপন করে নিয়েছে। তারা আমাতেই আস্থাশীল হয়েছেন। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সাদরে গ্রহণে আমি আপ্লুত করেছে। আমি আমৃত্যু তাদের আস্থার প্রতিফলন দিতে চাই। এই অঞ্চলের জনসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়নের কাজ করে যেতে চাই।

জামায়াত

খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা) কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী, আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন) কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর আমির মাহফুজুর রহমান, খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-দিঘালিয়া-তেরখাদা) খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) কেন্দ্রীয় মজলিসে কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উৎসবে নেতাকর্মীদের নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন।

খুলনা-২ আসনের জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি পূজা শুরু হাওয়ার আগে থেকেই তাদের খোঁজখবর নিতে। সনাতন ধর্মের লোকদের আগে থেকেই ভাবা হতো এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তারাও মনে করতো জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হিন্দুরা নির্যাতিত হবে। কিন্তু এবার তাদের এ ধারণা বদলে গেছে। ৫ আগস্টের পর হিন্দুরা না ডাকলেও জামায়াত শিবির তাদের পাহারা দিয়েছে। এসব দেখে তাদের ধারণা হয়েছে আগামীদিনে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে জামায়াতকে প্রয়োজন। জামায়াতই পারবে সবাইকে নিরাপদে রাখতে।

খুলনা-৩ আসনের জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশের সামাজিক সম্প্রীতির অন্যতম অংশীদার। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলাই আমাদের সবার লক্ষ্য। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের পূজা উৎসব অত্যন্ত সুন্দর, শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে।

ব্ল্যাংক চেক হতে চান না হিন্দুরা

নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ হিন্দু ধর্মালম্বীদের ভোট ব্যাংক বানিয়ে ব্যবহার করতো। হিন্দুরা আর কখনো একক দলের ভোট ব্যাংক হতে চান না।

খুলনা শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুন্ডু বলেন, আমাদের এখানে শুধু আওয়ামী লীগ আসতো না। বিএনপিও আসতো বিগত পূজাগুলোতে। এবার এসেছে জামায়াত। সবাইকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা কারও ব্ল্যাংক চেক না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকার চাই। প্রাণবন্ত একটি সংসদ চাই। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করি সুষ্ঠুভাবে একটি নির্বাচন যাতে হয়। এদেশে আমরা যারা বসবাস করি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতিসহ সবাই যেন একসঙ্গে মিলে মিশে বাসবাস করতে পারি।

এমআরএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।