চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এবার বাস বন্ধ করেছেন মালিকেরা নিজেরাই।
বর্তমানে একতা পরিবহনের বাস চলতে দেখা গেছে। এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী রুটে লোকাল বাস চলাচল করছে। তবে অন্য পরিবহন বন্ধ। মালিক-শ্রমিকদের টানাপোড়েনে কবে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
এর আগে চলতি মাসেই দুই দফা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বাস বন্ধ করেছিলেন চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা।
মালিকদের দাবি, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা অযৌক্তিক দাবি তুলছেন, যা পূরণ সম্ভব নয়। তাই মালিকেরা নিজেরাই এবার বাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালক প্রতি ট্রিপে পান ১,২৫০ টাকা, সুপারভাইজার ৫০০ টাকা ও সহকারী ৪০০ টাকা। ৭ সেপ্টেম্বর শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করেন। মালিকদের আশ্বাসে দুই দিন পর বাস চালু হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মালিক-শ্রমিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে চালককে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৭৫০ টাকা ও সহকারীকে ৭০০ টাকা দেওয়া হবে।
তবে মালিকদের অভিযোগ, বেশি বেতন নির্ধারণের পরও শ্রমিকেরা বিনা টিকিটে যাত্রী তুলছিলেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুত বেতন এখনো কার্যকর হয়নি। এর জেরে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে মালিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। আজ বিকেল পর্যন্ত বাস বন্ধ ছিল।
রাজশাহীর শিরোইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চাপ বেড়েছে একতা পরিবহনের বাসে। অনেকেই লোকাল বাসে চড়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বাড়তি যাত্রীর কারণে সেখানেও ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের যাত্রী রণজিৎ কুমার রায় বলেন, লোকাল বাস শুধু ঢাকার দিকে যায়। আমি পূজার ছুটিতে সুনামগঞ্জ যাচ্ছি, কিন্তু সরাসরি কোনো বাস নেই। আমাকে কষ্ট করে যাত্রা করতে হবে।
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, আমাদের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার আগেই মালিকেরা হঠাৎ বাস বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকেরা বসে আছে—বাস চালাতে দিলে চালাবে, না হলে যাত্রীরাই ভোগান্তিতে পড়বেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বজলুর রহমান রতন বলেন, মঙ্গলবার ঢাকায় বৈঠকে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। সভায় মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন- এবং সভা সুন্দরভাবে শেষ হয়। এরপর বাস চলাও শুরু হয়। কিন্তু শ্রমিকেরা পরবর্তীতে বিনা টিকিটে যাত্রী তোলা ও খোরাকি ভাতা দাবি শুরু করেছেন, যা মানা সম্ভব নয়। শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘাত করে বাস চালাতে চাই না। তাই কয়দিন বন্ধ থাকলে থাকুক।
নাটোরে শুক্রবার সকাল থেকে দেশ, ন্যাশনাল, গ্রামীণ, হানিফসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। একতা পরিবহন ও লোকাল বাস ছাড়া দূরপাল্লার অন্য সব পরিবহন বন্ধ।
এর আগে চলতি মাসেই শ্রমিকেরা দুই দফা বাস বন্ধ করেছিলেন। এবার তৃতীয় দফায় বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারসহ দূরপাল্লার যাত্রীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নাটোরের যাত্রী শোয়েব আকতার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেও নাটোর শহর দিয়ে বাস চলতে দেখেছি। অথচ সকালে টার্মিনালে এসে দেখি অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ। আগে ঘোষণা দিলে ভোগান্তি কিছুটা কমতো।
এসআরএস