ঢাকা, শনিবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২৮ জুন ২০২৫, ০২ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

যশোরে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার তিন আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:২৪, জুন ২৮, ২০২৫
যশোরে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার তিন আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার নন্দিতা মেহজাবিন কথা, অনন্ত আরমান কাব্য ও সহযোগী মোহাম্মদ উল্লাহ বাবলু

যশোরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তিন আসামিকে ঢাকার বনানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাসিম, সালমান এফ রহমান ও তৌফিক এলাহীর ঘনিষ্ঠ পরিচিত ফারজানা ইয়াসমিন নীলার মেয়ে নন্দিতা মেহজাবিন কথা, ছেলে অনন্ত আরমান কাব্য এবং সহযোগী মোহাম্মদ উল্লাহ বাবলু।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়িক কাজে প্রয়োজন জানিয়ে ফারজানা ইয়াসমিন নিলার নেতৃত্বাধীন চক্র যশোরের অভয়নগর উপজেলার ব্যবসায়ী শাহ আলম হোসেনের কাছ থেকে ২০২০ সালের ০৪ আগস্ট ৩ কোটি টাকা নেয়। বিনিময়ে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা।  

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিনব্যাপী ঢাকার বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের যশোরে নিয়ে আসা হয়েছে।

তবে মূলহোতা নীলাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তিনি বনানীর কে-ব্লক এলাকার কাজী এম এ মজিদের স্ত্রী।

এর আগে গত ২৪ জুন অভয়নগরের শিল্পশহর নওয়াপাড়ার মৃত শাহ আশরাফের ছেলে ব্যবসায়ী শাহ আলম হোসেন বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল শাহ আলম হোসেনের। ব্যবসার কথা বলে তারা ৩ কোটি টাকা ধার চান। পরে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট যশোর উপশহর এলাকায় এসে টাকা নেন তারা। টাকা নেওয়ার পর প্রথম মাসে মুনাফা দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। ফলে ২১ লাখ টাকা মুনাফা বকেয়া পড়ে। এক পর্যায়ে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন আসামিরা।

পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ০৩ জানুয়ারি মুনাফাসহ ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তারা। এ বিষয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়।

কিন্তু তিন মাস পার হলেও টাকা ফেরত না দিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা করতে থাকেন তারা। সর্বশেষ গত ১৫ জুন বিকেলে মোবাইলফোনে কল করে যোগাযোগ করলে আসামিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তারা টাকা ফেরত দেবেন না। বরং হুমকি-ধামকি দেন। এমনকি নীলা বাদী শাহ আলম হোসেনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকিও দেন।

পরে বাদী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নীলা কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের তিন নেতা বাহাউদ্দিন নাসিম, সালমান এফ রহমান ও তৌফিক এলাহীর ঘনিষ্ঠ। এই নেতাদের প্রশ্রয়ে তিনি বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরে নীলা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শাহ আলম হোসেন।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন জানান, গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মূল আসামি নীলাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নীলা চক্র যশোর উপশহরের আনিছুর রহমানের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা, ঢাকার হালিমের কাছ থেকে ২৫ লাখ এবং কুষ্টিয়ার সাজেদুল ইসলাম রাজিবের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ বিষয়ে নীলার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।