ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় ধস

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২১
রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় ধস ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: দেশে দ্বিতীয়বারের মতো করোনার (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সরকারের নির্দেশ মেনে রাঙামাটিতে পর্যটকদের আগমন বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

দীর্ঘ দুই মাস জেলায় পর্যটক না আসায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়েছে।

নেমে এসেছে অর্থনৈতিক ধস। ঋণ, কর্মচারীদের বেতন, ভাড়া, সরকারি কর সব মিলে তারা  দিশেহারা। ছোট-ছোট অনেক পর্যটন ব্যবসায়ী এ খাত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা অংক কষছেন তারা ভবিষ্যতে এ শিল্পকে কিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবেন।



রূপের রাণী খ্যাত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি কাঠ, মাছ ব্যবসার পর পর্যটন ব্যবসা তৃতীয় অর্থনৈতিক বড় খাত। পর্যটন শিল্পের জন্য দেশে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এ অঞ্চলের। সারা বছর পাহাড়ি অঞ্চলটিতে পর্যটকদের আগমন থাকে। তবে বিশেষ দিবস যেমন- বিজু-সাংগ্রাই তথা পহেলা বৈশাখ, ঈদ এবং শীতের মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মূলত এ সময়টাতে কয়েক কোটি আয় করে তাদের পকেটে ভরে। কিন্তু করোনার কারণে এ বিশেষ দিনগুলোতে পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ছিলো।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এই আয় বন্ধ থাকায় তাদের লোকসানের পাল্লা দিনদিন ভারি হচ্ছে। গত বছরও করোনোর কারণে দীর্ঘ চার মাস পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে পড়তে হয়েছে ঋণের কবলে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ঋণের বোঝা ভারি হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

তারা বলেন, গত বছর চার মাস পর্যটক না আসায় আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম; চলতি বছরে পর্যটকদের আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় আমরা ভেবেছিলাম এইবার হয়তো ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু বিধিবাম; করোনা আবারো হানা দেওয়ায় সরকার পর্যটক ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। যে কারণে আমরা আবারো মহাসংকটে পড়ে গিয়েছি।



সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টাকা আয় করি। কিন্তু করোনার কারণে আমরা কয়েকটি মৌসুম সেই আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর পর্যটক না আসায় আমরা অর্ধকোটি টাকাও আয় করতে পারেনি। তারপরও পর্যটন ব্যবসায়ীরা করোনাকালীন বন্ধের সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এ বছর আয় করার জন্য তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে সৌন্দর্যবর্ধন এবং সংস্কার কাজে কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু করোনার নতুন ঢেউয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ব্যবসায় ধস নামে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে সর্বশান্ত হয়েছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন কটেজ মালিক সমিতির এ নেতা।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত বছরও কয়েক কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এইবার আশা করেছিলাম ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেবো। কিন্তু সব শেষ। ঋণের বোঝা, কর্মচারীদের বেতন সব মিলিয়ে আমাদের মাথায় বাজ পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি কোনো প্রণোদনা পাইনি। সরকারি করের টাকা পরিশোধ করতে হবে। নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছে তা জলে গেছে। কি করবো জানি না।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ অথনৈতিক চালিকা শক্তি হলো পর্যটন ব্যবসা। বিগত বছর এবং এছর সব মিলে আমরা এক কোটি টাকার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আর কিছুদিন চলতে থাকলে আমরা কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হবো। সরকারের রাজস্ব থাকবে শূন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।