ঢাকা, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

পর্যটন

ভ্রমণ হতে পারে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০০, জুন ৬, ২০২৫
ভ্রমণ হতে পারে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে

খাগড়াছড়ি: চারদিকে চোখ জোড়ানো পাহাড় আর পাহাড়। এত পাহাড় এত বন-বনানী পাখ-পাখালির কলকাকলি, এত ঝরণায় মুখর জেলা খাগড়াছড়ি।

হাজারো ছোট-বড় পাহাড়। আর সেই পাহাড় ছুঁয়ে যায় আকাশের মেঘ। শরৎ হেমন্ত এবং শীতে শুভ্র মেঘের খেলাও চলে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ঘেঁষা খাগড়াছড়ি অঞ্চল পরিণত হয় প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা ভূমিতে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে করেছে আরও নয়নাভিরাম।

আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র: এটি খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে আকর্ষণীয় সুদৃশ্য নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট। সূর্যাস্তের পর আলুটিলা থেকে খাগড়াছড়ি দেখা অর্থাৎ রাতের খাগড়াছড়ি শহর যেন আর এক মনলোভা দৃশ্য। দূর থেকে দেখা যায় ঘন কালো অন্ধকারে লাখো বাতির মিটি মিটি আলো। যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কল্পচিত্র। বলা যায় বিনোদনপ্রেমী একজন পর্যটকের মনো আকর্ষণ উপকরণে ভরপুর। আলুটিলায় পর্যটকদের জন্য বসার এবং পর্যাপ্তব্যবস্থা আছে।

রহস্যময় সুড়ঙ্গ: আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনকালে পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণ। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ সুড়ঙ্গ দিয়ে এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হওয়া যায়। পাহাড়ের চোরা এ সুড়ঙ্গ দিয়ে একা ভ্রমণ যেকোনো পর্যটকের শরীর শিউরে উঠবে। সুড়ঙ্গ পেরিয়ে নিজেকে দুঃসাহসিক ভাবতে ভালো লাগবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সুড়ঙ্গে ঢোকার জন্য মশাল পাওয়া যায়।

রিছাং ঝরণা: আলুটিলার পাদদেশে এই ঝরণাটি অবস্থিত। স্থানীয় মারমারা ঝরনাটিকে রিছাং ঝরনা নাম দিয়েছে। এ ঝরনা থেকে কিছু দূরে প্রায় ৩০ হাত উচ্চতার আরো একটি ঝরনার দেখা মিলবে। পাহাড় আর সবুজের বুক ছিঁড়ে পড়া ঠান্ডা পানি অনবরত দুই ঝরনার বুক দিয়ে ছুটে চলছে।

দেবতা পুকুর: জেলার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাইসছড়ির নুনছড়িতে ৭৫০ ফুট ওপরে অবস্থিত ইকটি ভিন্ন প্রকৃতির স্বচ্ছ পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পুকুর।

স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরাদের মতে, পাহাড়ের ওপরের এই পুকুরের পানি কখনো কমে না এবং পানি পরিষ্কারও করতে হয় না বলে তার নাম দিয়েছে মাতাই পুখুরি, দেবতা পুকুর। বছরের অধিকাংশ সময় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায় এ পুকুরে। তবে বিশেষ করে নববর্ষ বা বৈসাবী দিনগুলোতে হাজার হাজার পর্যটকের দেখা মেলে এখানে।

অরণ্য কুঠির: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এ বৌদ্ধ মন্দির। এখানে দেখা যাবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তির। অরণ্য কুঠিরে রয়েছে ৪৮ ফুট উচ্চতার বাংলাদেশের বৃহত্তম বোদ্ধ মূর্তি। বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজের পাশাপাশি এ মূর্তি ছাড়াও আরও অনেক মূর্তি দেখা মিলবে।

তৈদু ছড়া ঝরনা: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তস্থল দুর্গম সীমানা পাড়া গ্রামে অবস্থিত তৈদুছড়া ঝরনা। আকাঁ-বাকাঁ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে এ ঝরণায়। অ্যাডভাঞ্চর এ যাত্রায় যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন ত্রিপুরা জনগোষ্টীর জীবনযাত্রা। শেষ পর্যায় দেখবেন বিশাল বিশাল হাতির মাথা আকৃতির পাথরের সারি। তারপর বিশাল সেই তৈদু ছড়া ঝরনা। ঝরনার সেই পানির প্রবাহ দিয়ে গেলে দেখতে পাবেন আরও একটি সু উচ্চ ঝরণা।

জেলা পরিষদ পার্ক: জেলা সদরের জিরো মাইল এলাকায় প্রায় ২২ একর জায়গাজুড়ে এই পার্কটির অবস্থান। দুই পাহাড়ের সংযোগে এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, রয়েছে বাচ্চাদের জন্য কিডস জোন, এলাকাজুড়ে রয়েছে পর্যটন কটেজ। পার্বত্য জেলা পরিষদের সরাসরি তত্বাবধানে পরিচালিত এই পার্কে রান্না-বান্নাসহ পিকনিক করার আদর্শ জায়গা।

ডিসি পার্ক: খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্রায় ১৬০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে ডিসি পার্ক। তিনটি লেক, পাখির অভয়ারন্য, ট্রি হাউন, জিপ লাইনিং, ক্যাম্পিং, ওয়াটার জিপ লাইনিং, কায়াকিং, ক্লাইম্বিং, আর্চারিসহ প্রকৃতি উপভোগের পাশাপাশি রোমাঞ্চকর অ্যাক্টিভিটি রয়েছে পার্কটিতে। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে পার্কটি।

যাতায়াত ব্যবস্থা: খাগড়াছড়ি দেখতে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সমিতির আরামদায়ক বাস ছাড়ে। যেমন এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন, হানিফ, গ্রিনলাইন ইত্যাদি। ঢাকার সায়াদাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী, কলাবাগান, টিটি পাড়া থেকে টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়। আবার ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে বাসের টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়।

কোথায় থাকবেন: খাগড়াছড়িতে থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ পর্যটন মোটেল। তাছাড়া জেলা সদরে ব্যাক্তি মালিকানাধীন অরণ্যবিলাস, গাইরিং, হিল প্যারাডাইজ, হিল টাচসহ বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। রুম অনুযায়ী দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে এসি-ননএসি রুম পাওয়া যাবে।

কিভাবে ঘুরবেন: শহরেই চাঁদের গাড়ি, কার, মাইক্রো পাওয়া যায়। দরদাম করে ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন এলাকাগুলো।

এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।