বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা অন্য যেকোনো দল যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে।
বিবিসি বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ‘জুলাই গণভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপির অবস্থান কী’, ‘যারা অপরাধী তাদের বিচার, আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা না পারা’ এবং ‘দলটি রাজনীতি করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে বিএনপির অবস্থান’ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়।
উত্তরে তারেক রহমান বলেন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাসে আছি। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছিল, এরপর চিকিৎসার জন্য আমি বিদেশে আসি। আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
তিনি বলেন, সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে। আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
তিনি আরও বলেন, যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় জেলের ভিতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে- এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটি প্রতিশোধের কোন বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন: দ্রুতই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, অংশ নেবেন নির্বাচনে
তারেক রহমান বলেন, দল হিসেবে তারা (আওয়ামী লীগ) যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে- জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।
এমজে