জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, দুর্নীতিতে টানা পাঁচ বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল এবার ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই পাথর-বালু লুটে চ্যাম্পিয়ন। তারা ৫ আগস্ট পরবর্তীতে দেশের মালিক বনে গেছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ঢাকা-৬ আসনের সর্বস্তরের ওলামা- মাশায়েখ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের জনগণ ভোটের মাধ্যমে বয়কট করবে। আগামী নির্বাচনে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে ইসলামের পক্ষে এক নীরব বিপ্লব ঘটবে। আলেমদের ঐক্যের আভাসে পুরো জাতি খুশি হলেও একটি দল খুশি হতে পারেনি। কারণ তারা জানে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য হলে জনগণ ইসলামী দলের পক্ষে রায় দেবে, তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা রয়েছে। আগামী দিনে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বির্নিমাণে আলেম সমাজ এক হয়ে ইসলামের পক্ষে ভূমিকা রাখবেন ইনশাআল্লাহ।
যারা ক্ষমতায় গিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে চায়, এখন বাস্তবায়নে তাদের আপত্তি কেন প্রশ্ন রেখে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এর মানে হচ্ছে ওই দল আবারও জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। সব দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পক্ষে অবস্থান নিলেও একটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে চায় না, তারা জুলাই বিপ্লবকেই অস্বীকার করে।
জুলাই বিপ্লবকে অস্বীকার করলে আওয়ামী লীগের মতোই পরিণতি ভোগ করতে হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যাশিত রাজনীতি করতে হবে। নতুবা জনগণ উপযুক্ত জবাব দেবে।
‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ. এইচ. এম আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করা হবে। আলেম-ওলামাদের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করা হবে। ইমামদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। ইসলাম ও দ্বীনের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবো। আলেমদের ঐক্য ব্যতীত দ্বীন কায়েম করা সম্ভব হবে না।
তাই দলমত, বিভেদ ভুলে ইসলাম ও দ্বীনের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশের শুরুতে ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা-৬ আসনে নিজের উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে উপস্থিত আলেম-ওলামারা বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন। আলেম-ওলামাদের মতামত ও পরামর্শের আলোকে আগামী ঢাকা-৬ আসন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. মান্নান বলেন, নতুন বাংলাদেশের রোল মডেল হবে ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকা।
স্বপ্নের ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকা গড়তে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সর্বসাধারণের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনের নির্বাচন পরিচলক মো. কামরুল আহসান হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ, কাঁটাবন জামে মসজিদের খতিব প্রফেসর ড. রফিকুর রহমান মাদানী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলামসহ বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার মুফাসসির, মুফতি এবং মুহাদ্দিসরা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সব থানা আমির-সেক্রেটারিসহ দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
টিএ/এইচএ/