ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

আ.লীগ নেতাকে মারধর করে বাইকসহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
আ.লীগ নেতাকে মারধর করে বাইকসহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে (৫০) মারধর করে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।  

মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খন্দকার আব্দুস সালাম তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই তার মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আব্দুস সালামকে বেদম মারধর করেন। একপর্যায় তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

পরে স্থানীয়রা আহত আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত বছর খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পল্লবীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন আব্দুস সালাম। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে খন্দকার আব্দুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এরই জেরে ফরিদা হাসান পল্লবীর উপস্থিতিতে তার দুই ছেলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আব্দুস সালামকে একা পেয়ে মারধর করেন।

মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, আজ আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপরে অর্তকিত হামলা চালায় তার ছেলেরা। আমাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে পানির ভেতরে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল সব নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল জানান ‘তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে কেউ আঙুল তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। পরে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ ভাই তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোনো এক লোকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘পল্লবী ও তার ছেলে পিয়াল এরা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের কর্মী। এরাই উপজেলায় হাঙ্গামা মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে মারধর করে মোটরসাইকেলসহ তাকে পুকুরে ফেলে দেওয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারি। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরুতর তেমন কোনো আঘাত নেই। তবে তাকে চড়থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেনহার্ট সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।