ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আমাকে অবাঞ্ছিত বলা স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ফসল: বাদশা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
আমাকে অবাঞ্ছিত বলা স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ফসল: বাদশা

রাজশাহী: সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে অবাঞ্ছিত বলা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, জঙ্গিবাদী এবং খুনিদের ষড়যন্ত্রের ফসল। কিন্তু এটা কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না।

আমরা ক্যাম্পাসে যাবো, সভা করবো।

রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তিনি। সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন বাদশা। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপিও ছিলেন বাদশা।

ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ আসন থেকে ভোটে লড়েন বাদশা। তিনি ধারণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। এর পেছনে রাজনীতি আছে বলেও তিনি জানান।

হড়গ্রাম এলাকায় নিজ বাসভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জোরালো দাবি করেন ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, রাবির ইতিহাসে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই রাজনৈতিক। এসবের পেছনে মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের জড়িত থাকার প্রমাণ আছে। রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, নাকি হত্যা সেটি নিশ্চিত হতে অবশ্যই ময়নাতদন্তের প্রয়োজন।

তিনি জানান, আগামী ২৬ অক্টোবর রামেক হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির বৈঠক আছে। বৈঠক থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হবে। শাহরিয়ারের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে প্রয়োজনে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ফজলে হোসেন বাদশার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের দাবি তুলেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে রাবি ছাত্রদের বিপক্ষে কথা বলছেন বাদশা। রোববার দুপুরে তারা ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক এ ভিপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে বাদশা বলেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে রাকসুর ভিপির তালিকা থেকে আমার নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছি, সেই ক্যাম্পাসের ছাত্ররা কখনো দুষ্কৃতিকারী হতে পারে না। স্বাধীনতা বিরোধীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

শিগগির ক্যাম্পাসে গিয়ে সমাবেশ করার হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।

এর আগে দুপুরে রাবি শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ করে তাকে  ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তার কুশপুতুলও দাহ করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের পেছনে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় এমপি ফজলে হোসেন বাদশার বেসামাল ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার এবং তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ নয় দফা দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা রাবির সাবেক শিক্ষার্থী হয়েও মিথ্যাচার করেছেন। দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে তিনি সরাসরি শিক্ষার্থীদের খুনি বানিয়ে দিলেন। উনি না জেনে আমাদের ষড়যন্ত্রকারী বলেছেন। আমরা চেয়েছিলাম ময়নাতদন্ত হোক। কিন্তু শাহরিয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার না করা হয়েছে।

তারা আরও বলেন, এমপি বাদশা না জেনেই কাগজকে মাথার মগজ বলছেন। এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি। সেই সাথে উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না চাইবেন তাকে মতিহারের সবুজ চত্বরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠী মারা গেছেন এমন অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর করে রাবি শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনায় কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।