ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পাঁয়তারা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পাঁয়তারা!

লক্ষ্মীপুর: প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিরোধীয় জমি কেনার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ইউএনও অঞ্জন দাশ ও এসিল্যান্ড রাসেল ইকবালের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই জমিতে আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে সেখান থেকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে একপক্ষ।  

বুধবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুরে একটি আঞ্চলিক পত্রিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর কবির ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড শিবপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলী ভূঁইয়ার ছেলে।  

তিনি দাবি করেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তা তাকে হুমকিও দিয়েছেন। এতে পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছেন তিনি।  

লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর বলেন, আমার চাচা বেলাল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে ৯৬ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। জমিটির মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। বিরোধীয় জমিটি রায়পুর ইউএনও ও এসিল্যান্ড সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য কেনার পাঁয়তারা করছেন। আমার চাচার সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করার পর তিনি ওই জমি থেকে গাছ কাটার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় আমি ২৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানাকে নির্দেশ দেয়। আগামী ১৮ মে পর্যন্ত ওই জমিতে কোনো কাজ যেন না করা হয় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এ আদেশ পেয়ে রায়পুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম উভয়পক্ষকে নোটিশ দিয়েছেন।

এদিকে মামলার দিন রায়পুর উপজেলা ভূমি অফিসে মামলার কাগজপত্র আদালত থেকে পাঠানো হয়। কাগজপত্র পেয়েই সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবার মোবাইল ফোনে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় জাহাঙ্গীরকে তিনি ধমক দিয়ে বলেন, ‘মামলার কাগজে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নেই। মিথ্যে মামলা দিয়ে বেলালকে হয়রানি করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জমি কেনার বিষয়ে সব কথাবার্তা শেষ পর্যায়ে। এ জমি নিয়ে কোনোভাবেই বাধা দেবেন না। '

অন্যদিকে বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বিরোধীয় জমি থেকে বেলাল গাছ কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর গিয়ে বাধা দেন। এতে বেলালের ফোন পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সহকারী রাব্বী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান লোকজন নিয়ে আসেন। এসময় তারা জাহাঙ্গীরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। একপর্যায়ে রাব্বী তার মোবাইল ফোন দিয়ে জাহাঙ্গীরকে ইউএনও অঞ্জন দাশের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এসময় জাহাঙ্গীরকে হুমকি দিয়ে ইউএনও বলেন, গাছ কাটতে বাধা দিয়েছেন কেন? 

জাহাঙ্গীর আদালতের নির্দেশনার কথা জানালে ইউএনও বলেন, 'জমিটি তারা ক্রয় করেছেন। জমি দখলে যাওয়ার পরে তারা টাকা লেনদেন করবে। যদি বাধা দেন তাহলে আপনাকে (জাহাঙ্গীর) গ্রেফতার করানো হবে। আপনার বিভিন্ন ধরনের বিপদ হবে। বাড়িছাড়া হতে হবে। '

জাহাঙ্গীর বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ইউএনও জোরপূর্বক জমিটি আমার চাচাকে দখল করে দেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছেন। আমাকে তিনি বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে এখন আমার আতঙ্কে দিন কাটছে।  

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল বলেন, জমিটি নিস্কন্টক। প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য আমরা জমিটি কিনবো। সব কথাবার্তা সম্পন্ন হয়েছে। মামলা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। আশাকরি দ্রুত এটি নিস্পত্তি হবে। কিন্তু জাহাঙ্গীর জমি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছে। আর তাকে কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি। তার সঙ্গে আমার কোনো কথাও হয়নি।

এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। গাছ কাটায় সমস্যা সৃষ্টি হলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানতে পারি। জাহাঙ্গীরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।