জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আলোচিত আসামিদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে হাসিনাসহ মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, গত এক বছরে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থায় (ইন্টারপোল) রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই ২৮ জনের বিরুদ্ধে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল চারজনের জন্য রেড নোটিশ জারি করেছে।
অবশ্য ওই চারজনের নাম জানাতে পারেনি সূত্রটি। এছাড়া ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদনটি লেখার সময় এমন কারও নাম এখনো দেখা যায়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-এমপি ও তাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। এ তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, একই মন্ত্রিসভার সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
জানা গেছে, সাবেক উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত কিছু কারখানার মালিক/ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে।
রেড নোটিশ জারির পর অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত হলে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিক বহিঃসমর্পণ অনুরোধ পাঠানো হয়। বহিঃসমর্পণ অনুমোদিত হলে কূটনৈতিক চ্যানেল ও পুলিশের সহযোগিতায় আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি অনেকাংশে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের ওপর নির্ভরশীল।
একটি সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের অপরাধ সংক্রান্ত সব নথিপত্র অন্তর্ভুক্ত করে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করা হলেও সংস্থাটি সরাসরি তা জারি করে না। তাদের নিজস্ব একটি তদন্ত থাকে, যা সম্পন্ন হতে সময় লাগে। কখনো ইন্টারপোলের তদন্তে দেখা যায়, আবেদনকৃত সকলের মধ্যে কিছুজনকে অপরাধী মনে হচ্ছে না। এমন ঘটনাও থাকতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, অভ্যুত্থানের সময় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং যারা পালিয়ে গেছে, উল্লেখযোগ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন: অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ‘ভাতের হোটেল’ খ্যাত সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ড শহরে সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের তালিকায় দেখা গেছে, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একই দেশে আছেন মনিরুল ইসলামও। সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে। প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও সৈয়দ নুরুল ইসলাম ভারতের মধ্যে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ১৪৯০টি মামলা। একই সময়ে অন্তত ১৩৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন ফিরে এলেও ৮১ জন এখনও পলাতক। পলাতকদের মধ্যে রয়েছেন: ৩ জন ডিআইজি, ১০ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন পুলিশ সুপার, ৯ জন অতিরিক্ত এসপি, ৫ জন এএসপি, ২৭ জন পরিদর্শক, ৮ জন এসআই, ৩ জন এএসআই এবং ৫ জন কনস্টেবল।
গত ৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ডিআইজি থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার ৪০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের অনুকূলে দেওয়া পদকও প্রত্যাহার করা হয়।
এজেডএস/এমজে