ঢাকা, রবিবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

মিরপুরে বাসে আগুন-গুলি: চাঁদার জন্য ১ মাস আগে কোপানো হয়েছিল চেকারকে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৩, অক্টোবর ৪, ২০২৫
মিরপুরে বাসে আগুন-গুলি: চাঁদার জন্য ১ মাস আগে কোপানো হয়েছিল চেকারকে

রাজধানীর মিরপুর-বনশ্রী রুটে চলাচলকারী আলিফ এন্টারপ্রাইজের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিল একটি গ্রুপ। চাঁদা না পেয়ে প্রায় এক মাস আগে ওই পরিবহনের এক চেকারকে কুপিয়ে আহতও করেছিল তারা।

সর্বশেষ ওই পরিবহনের একটি বাসের যাত্রীদের নামিয়ে তাতে গুলি চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয় গ্রুপটি।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭টার দিকে মিরপুর-১০ সংলগ্ন সেনাপাড়ায় মেট্রোরেলের ২৬৬ নম্বর পিলারের নিচে আলিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় তিনজন। তাদের মধ্যে একজন কাঁধের ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে বাসের জানালায় গুলি চালায়। পাশাপাশি বাসের চালককেও তারা মারধর করে।

আলিফ এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বশীলরা জানান, মো. নেছার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবহনের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। প্রায়ই সেনাপাড়ায় চেকার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করত তারা। চাঁদা না দিলে সড়কে বাস চালাতে দেবে না বলে হুমকিও দিত।

গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নেছার উদ্দিনসহ তিনজন সেনাপাড়া ওয়ালটনের গলিতে জাহাঙ্গীরকে ডেকে নিয়ে যায়। সেদিন নেছারের কাছে ছিল একটি আগ্নেয়াস্ত্র, আর সঙ্গের দুইজনের একজনের হাতে ছুরি ও অন্যজনের হাতে চাপাতি ছিল। তারা জাহাঙ্গীরের গলা, কাঁধ ও হাতে কোপায়। এতে তার হাতের রগ কেটে যায়।

এই ঘটনায় আলিফ এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে নেছার উদ্দিনসহ ৩-৪ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি রুজু হয়।

ভুক্তভোগী চেকার জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের কয়েক মাস পর থেকেই নেছারসহ কয়েকজন প্রায়ই আমাকে হুমকি দিত। বলত, চাঁদা না দিলে সড়কে বাস চালাতে পারব না। কোম্পানিকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম, তারা মীমাংসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নেছার চাঁদা না পেয়ে প্রায়ই এসে গাড়ির ওয়েবিল, কলম, খাতা নিয়ে যেত। এক পর্যায়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। ৩ সেপ্টেম্বর নেছার আমাকে গলিতে ডেকে নেয়। সঙ্গে ছিল আরও দুজন। তাদের একজন ফল কাটার ছুরি দিয়ে আমার গলায় পোচ দেয়, আরেকজন কাঁধে চাপাতি চালায়। আমি ঠেকাতে গেলে হাতে কোপ লাগে, এতে বুড়ো আঙুলের রগ কেটে যায়। তখন নেছারের কাছেও একটি পিস্তল ছিল। আমি তাদের ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে মূল রাস্তায় উঠে হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। ঘটনার পরও চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার নেছার ও তার সহযোগীরা বাসে গুলি ও আগুন দেয়।

পরিবহনের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) মারুফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নেছার ও তার সহযোগীরা আমাদের কাছে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা ও মাসে এক লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমাদের চেকারকে কুপিয়ে আহত করে। আমরা থানায় মামলা করি। তারপরও নেছার ফোনে হুমকি দিতে থাকে। বলে একজনকে কুপিয়েছি, এবার আরও বড় কিছু হবে। ঠিকই সে বড় ঘটনাই ঘটিয়েছে; যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে। আমরা পুলিশের ওপর আস্থা রেখে আবারও মামলা করেছি।

আলিফ এন্টারপ্রাইজের রোড ইনচার্জ মোহাম্মদ সাগর বলেন, গতকালের আগুনের ঘটনার পরও নেছার একটি অনলাইন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে হুমকি দিয়েছে— এখন শুধু গাড়িতে আগুন দিয়েছি, পরে আরও বড় কিছু হবে।

এদিকে ঘটনায় আতঙ্কে আছেন আলিফ এন্টারপ্রাইজের চালক ও হেলপাররা। বাসচালক মো. শাহীন বলেন, এক মাস আগে এক চেকারকে কুপিয়েছে, গতকাল আরেকটি বাসে আগুন দিয়ে চালককে মারধর করেছে। আগামীকাল হয়তো আমার সাথেও এমন কিছু হতে পারে। আমরা রাস্তায় থাকি, আমাদের দেখার কেউ নেই। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

মিরপুরের টাইমকিপার মো. আলাউদ্দিন বলেন, শুধু চালককে মারধর নয়, নেছার ১৫-২০ দিন আগে আমাদের এক বাসের হেলপারের কাছ থেকেও সারাদিনের ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে গেছে।

এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “বাসে আগুনের ঘটনায় কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছি।

এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।