ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তীব্র তাপদাহে শ্যামনগরে চিংড়ি ঘেরে মড়ক, দিশেহারা চাষিরা  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
তীব্র তাপদাহে শ্যামনগরে চিংড়ি ঘেরে মড়ক, দিশেহারা চাষিরা  

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে প্রচণ্ড তাপদাহে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়ি চাষিরা।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রচণ্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে যাচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাগদা ও ১১০ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে বাগদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩২৮ ও গলদা চাষের ঘের আছে ১ হাজার ৪১০টি।

উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মাহাবুব আলম জানান, বছরের শুরুতে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়া হয়। দুই সপ্তাহ আগে থেকে ঘেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। আর যেসব জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর শরীরও দুর্বল। মাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা গ্রামের চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী সন্তোষ মণ্ডল ও একই এলাকার জয়ন্ত মণ্ডল জানান, তারা ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা লোন করেছেন। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে লোন পরিশোধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাছ মরার কারণে এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকারও মাছ বিক্রি হয়নি।

ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী এলাকার চিংড়ি চাষি ইব্রাহিম খলিল জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ঘের করছেন। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। ঘেরে ৪৫ হাজার বাগদার পোনা ছেড়েছিলেন। এখন প্রতিটি ৪০ গ্রাম করে ওজন হয়েছে। কিন্তু তীব্র এই গরমে পানি বিষিয়ে ওঠার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তার ঘেরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত পরিচর্যাও করা হয়। তবে রৌদ্রের কারণে কোনো হিসাব নিকাশ মিলছে না।

একই এলাকার চিংড়ি চাষি রাজু আহমেদ বলেন, তিনি এবার নিজের এবং অন্যের জমি ইজারা মিলিয়ে ২০০ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রথম কোটায় অবমুক্ত করা বাগদা মাছ মরে গেছে। এতে তার তিন লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার এলাকার ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানি নেই বলে জানান তিনি। তার ওপর প্রচণ্ড রৌদ্রের জন্য পানি লালচে হয়ে উঠছে।

এছাড়াও কয়েকজন চিংড়ি চাষি জানান, এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কোনো চিংড়ি ঘেরে গিয়ে কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা তাদের কী করা উচিত সে বিষয়ে কেউ পরামর্শ দেয়নি। তাই একমাত্র জীবিকা চিংড়ি চাষ নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর শ্যামনগরে চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ টন। তবে চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চিংড়ির আড়তদাররা জানান, এবার মাছ মরে যাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। এজন্য বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। তবে এবার প্রচণ্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করেনি। জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করার দরকার তাও ঠিকমতো করেনি।

তবে এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে মৎস্য চাষিদের উদ্দেশ্যে বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় ঘেরের মাটি কেটে গভীরতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।