ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জুনেই বাজারে আসছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
জুনেই বাজারে আসছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা হাড়িভঙ্গা আম

নীলফামারী: এবার মৌসুমের শুরু থেকে আম আসা পর্যন্ত টানা খরার কারণে উত্তর জনপদের অত্যন্ত সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন কম হয়েছে। গেল বছরের তুলনায় সাইজেও ছোট হয়েছে এই আম।

বর্তমান আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে আগামী জুনেই বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা এমনটি জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন।

সরেজমিন রংপুরের বদরগঞ্জ এলাকার রামনাথপুর, গোপীনাথপুর, বিষ্ণুপুর, কালুপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আম বাগানে এবার ফলন কম হয়েছে। আকারেও ছোট হয়েছে আম। টানা তাপপ্রবাহে কারণে অকালে ঝরে পড়েছে হাঁড়িভাঙা আমের গুটি। বৈরী আবহাওয়ায় আমের ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন আম চাষিরা।  

আম চাষিদের ভাষ্য, আমের মুকুল আসার সময় পৌষ-মাঘ মাসে বৃষ্টি হওয়ায় বাগানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর টানা খরা ও তাপপ্রবাহে আম গাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ঝরে পড়েছে আমের গুটি। পোকা দমনে কীটনাশক ও সেচ দিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। ফলে আম উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আম চাষি সাজেদুর রহমান, সাঈদ হোসেন জানান, বাগানে পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সেইসঙ্গে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগানে নিজ উদ্যোগে সেচও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও আশানুরূপ ফলন আসেনি। আমের ফলন ও আকারে ছোট হওয়ায় পাইকারদের আনাগোনাও কম দেখা যাচ্ছে। ফলে এই আম আবাদ করে এ বছর চিন্তায় আছি।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাগানে পোকা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আম গাছে কীটনাশক ও পানি ছিটাতে। প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ায় চাষিরাও বিপাকে পড়েছেন। এমন অবস্থায় আমের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম। গত কয়েক বছর থেকে আমদৌত্য হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। এর মধ্যে ভারতের নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে মৌসুমি সুস্বাদু ফল হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাড়িভাঙ্গা আম পাঠিয়ে আসছেন কয়েক বছর ধরে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে এই আম পাঠিয়ে থাকেন আত্মীয়-স্বজনরা।  

এলাকার লোকজন জানান, রাজশাহী থেকে ম্যাংগো ট্রেন চালু হলে রংপুর থেকে চালু হবে না কেন? 

উল্লেখ্য, হাড়িভাঙ্গা আম বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ও সুস্বাদু আম। বিশ্ববিখ্যাত এ হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়ন থেকে। আমটির গোড়াপত্তন করেছিলেন নফল উদ্দিন পাইকার নামে এক বৃক্ষবিলাসী মানুষ। শুরুতে এর নাম ছিল মালদিয়া। আম গাছটির নিচে তিনি মাটির হাঁড়ি দিয়ে ফিল্টার বানিয়ে পানি দিতেন। একদিন রাতে কে বা কারা ওই মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে। ওই গাছে বিপুল পরিমাণ আম ধরে। সেগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে লোকজন ওই আম সম্পর্কে জানতে চান। তখন চাষি নফল উদ্দিন মানুষকে বলেন, যে গাছের নিচের হাড়িটা মানুষ ভেঙে ফেলেছিল সেই গাছেরই আম এগুলো। তখন থেকেই ওই গাছটির আম হাঁড়িভাঙ্গা নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃ গাছটির বয়স ৬৩ বছর।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
আর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।