ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

ঐতিহ্য ধরে রাখতে ট্রাম নিয়ে নানা পরিকল্পনা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
ঐতিহ্য ধরে রাখতে ট্রাম নিয়ে নানা পরিকল্পনা  কলকাতার রাস্তায় ট্রাম-ছবি-বাংলানিউজ

কলকাতা: কলকাতার সঙ্গে এখনও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ট্রাম। একদিকে মাটির গভীরে মেট্রো রেল আধুনিকতার চিহ্নের প্রতীক হলে অন্যদিকে ট্রাম শহরের ঐতিহ্যের প্রতীক। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় ট্রামের যাত্রা শুরু। কিন্তু সাত বছর চলার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ ব্যবসার দিক থেকে ট্রাম পরিষেবা মোটেও লাভজনক ছিল না। ১৯শ’ মাইল বিস্তৃত ট্রাম লাইন তখন ঘোড়ায় টানতো।

পরে উনিশ দশকে প্রথম বিদ্যুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানো শুরু হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেসময় কলকাতার মানুষের পছন্দের বাহন হয়ে ওঠে ট্রাম।

তৎকালীন বাসের ভিড় এড়িয়ে নিত্যদিনের গন্তব্যে যাওয়ার একমাত্র বাহন ছিল ট্রাম। তবে মেট্রোরেল চালুর পর থেকেই ট্রামের প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমতে থাকে। তারপর থেকে সেভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগমের অন্যতম যান ট্রাম। তবে ভারতে একমাত্র কলকাতায় টিকে থাকা ট্রাম যাতে একেবারে বিলুপ্ত না হয় তার জন্য ভিন্ন পরিকল্পনায় ট্রামকে জনপ্রিয় রাখতে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবহন নিগম।
 
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার ট্রামেই গড়ে উঠতে চলেছে চলন্ত রেস্তোরাঁ। এটি হবে শহরে প্রথম চলন্ত রেস্তোরাঁ। আমেজ করে পছন্দসই খাবারের স্বাদ নিতে নিতেই হবে শহর ভ্রমণ। আর তার জন্য এবার ট্রাম ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগম। তবে শুধু রেস্তোরাঁই নয়, নিগম কর্তারা বলছেন, ভাড়া নিয়ে ঐতিহ্যের ওই ট্রামে কেউ বিয়ের আসরও বসাতে পারে। অনেকেই তো বিয়ের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে আসর বসান জলযান, এমনকি বিমানেও। বিয়ের জন্য কেউ হেরিটেজ ট্রাম ভাড়ায় চাইলে, তা দেওয়া হবে।  

পরিবহন নিগমের এক কর্মকর্তা বলেন, রেস্তোরাঁর জন্য ট্রাম ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কয়েকদিন আগেই আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে। তবে তাতে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া আছে। আগ্রহপত্র জমা পড়ার পর তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। ঠিক হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নন-এসি ট্রাম ভাড়ায় দেওয়া হবে। তাতে এসি বসানোসহ যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করে নিতে হবে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে। তবে কোনোভাবেই ট্রামের মধ্যে রান্না করা যাবে না। খাবার অন্যত্র তৈরি করে ট্রামে তুলতে হবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত? পরিবহন নিগম সূত্রে জানা গেছে, শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সেকারণে আগের তুলনায় ট্রাম পরিষেবা অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। পরিবহন নিগমের হাতে ট্রাম রয়েছে ২৬৯টি। কিন্তু বর্তমানে দিনে গড়ে ৪৫ থেকে ৪৬টির বেশি ট্রামকে রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। তাই চলনে সক্ষম থাকলেও বহু ট্রামকে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। সেইসব ট্রামকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছিল কিছুদিন ধরেই। সেই সূত্রেই রেস্তোরাঁর জন্য ট্রাম ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে আশায় রয়েছেন কর্তারা। তারা জানান, এর আগে শহরে ট্রাম-মিউজিয়ামের পরিকল্পনা ‘সফল’ হয়েছে। ধর্মতলা চত্বরে শহরের ঐতিহ্যবাহী ট্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে একটি আস্ত ট্রামকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তার একটি বগিতে রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। সেখানে থাকে চা-কফির সঙ্গে বিস্কুট, স্ন্যাকসের মতো খাবার। নিত্যদিন অনেকেই সেখানে ভিড় জমান। এছাড়া কলকাতায় উৎসবের দিনে বিভিন্ন এনজিও ট্রাম ভাড়া নিয়ে পথশিশু ও বৃদ্ধাশ্রমের বয়স্কদের শহর পরিদর্শন করায়, তাতেও আয়ের দিক থেকে যথেষ্ট সাফল্য এসেছে। এছাড়া জন্মদিনসহ অন্যান্য ইভেন্টে ট্রাম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পও অনেকটা জনপ্রিয় হয়েছে যাত্রীমহলে।
 
বর্তমানে এক বগির এসি ট্রাম চালাচল করে। নিগম কর্তাদের ধারণা, ট্রাম-রেস্তোরাঁ চালু হলে তা জনপ্রিয় হবে। বর্তমানে এসি বাস বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এবার ট্রামকেও জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন ইভেন্ট ছাড়াও শহরে আরও বেশি করে এসি ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
 
আগামীতে কলকাতায় ট্রাম থাকবে কিনা তা বলবে ভবিষ্যত। তবে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ২৩ মার্চ, ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।