ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নিটোরে সব কিছুই লিমিটেড, শুধু রোগীই আনলিমিটেড

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
নিটোরে সব কিছুই লিমিটেড, শুধু রোগীই আনলিমিটেড ড. শাহ আলম, ছবি-জিএম মুজিবুর

ঢাকা: অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ভায়োলেট ইউনিট (২) এর  ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. শাহ আলম।  যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পাইন সার্জারি এবং ব্রিটেন থেকে স্পাইনের উপরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। একাধারে  স্কটিশ রিসার্চ সোসাইটির অ্যাক্টিভ ফেলো ও বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকও তিনি।

সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এখন বছরে প্রায় এক হাজার জটিল ভাঙ্গা হাড়ের রোগীদের হাড় জোড়া দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।

বৃহস্পতিবার ( জুন ০৮) সকালে নিটোরে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিক। দু’পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন আজ-

বাংলানিউজঃ  হাড় ভাঙ্গা  চিকিৎসার উন্নয়নে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে?

. শাহ আলম: সবার জানা জরুরি হাড় ভাঙ্গা রোগীর জন্য নিটোরে এখন অনেক উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন অনেক ডাক্তার জটিল কঠিন রোগের অপারেশন করছেন। আমি প্রতি বছর বিদেশ যাই। ইংল্যান্ড, আমেরিকায় ও  ভারতে আমার অনেক ডাক্তার বন্ধু আছে। বিদেশ থেকে ১০ থেকে ১২ জন ডাক্তার দেশে আনা হচ্ছে। এসব বন্ধুদের নিয়ে তিন থেকে চার দিনের একটা প্রোগ্রাম করি। সবাই হাড়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নত নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি শেয়ার করি। ফলে দেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অনেক সুফল পাচ্ছি।      

বাংলানিউজঃ গরিব দুঃস্থদের বিনা পয়সায় হাড়ের চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা আছে কি?

. শাহ আলম: ২০১৫ সাল থেকে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প শুরু করছি। মাগুরা ও ময়মনসিংহে দুইটি ক্যাম্প করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে দেশের অন্যান্য স্থানে যাবো সাধারণ মানুষের মধ্যে হাড়ের উন্নত চিকিৎসা দেবো। অনেকে সময় গরিব মানুষের পক্ষে হাড়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দেব। ’

বাংলানিউজঃ নিটোরে বর্তমানে চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা কেমন?

. শাহ আলম: সব কিছুই লিমিটেড শুধু রোগীই আনলিমিটেড। নিটোর ৫০০ বেডের হাসপাতাল। প্রতিদিন এক হাজার রোগীর টার্নওভার হয়। সব সময় ৭০০ রোগীর এন্টারটেইন হয়। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ১৫০টা রোগী এখানে আসে। এর মধ্যে ১০০ জন  প্লাস্টার করে চলে যাচ্ছে। ৫০টা রোগী আবার থেকে যাচ্ছে। ডাক্তার, নার্স লিমিটেড কিন্তু রোগী আনলিমিটেড। সেদিন বাজেটে দেখলাম রোগীর জন্য প্রতিদিন ২ টাকা বরাদ্দ। এটা খুবই যৎসামান্য। এই বাজেট দিয়ে কি করবো। বাজেটে তো সরকার দুই টাকার অধিক দিতে পারছে না। এর পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স, সব কিছুর স্বল্পতা। আমরা বিদেশ থেকে শিক্ষা, গ্রহণ করছি, অনেক প্রযুক্তিও নিয়ে আসছি। কিন্তু কম বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় এগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারছি না।

বাংলানিউজঃ নিটোরে অনেক কিছুরই অব্যবস্থাপনা দেখা যায়? এটা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি?

. শাহ আলম: মেরুদণ্ডে টিবি হয়ে হাড় বাঁকা হয়েছে এক রোগীর। জটিল অপারেশন শেষে তার জন্য দরকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা বেড। আমি রাউন্ডে গিয়ে দেখি তার বিছানা অ-পরিষ্কার। নার্সদের প্রশ্ন করি আপনি কি এই পুরাতন বেডে বসবেন। তখন নার্সরা বলে না! তখন আমি বলি আপনি যদি এই বিছানায় না বসেন তবে কেন রোগীর জন্য এই পুরাতন বিছানা। তখন নার্সরা উল্টা যুক্তি দেখায়, ‘স্যার এখনও ধোপা বেড পরিষ্কার করে দেয়নি’। এটা নার্সদের কমন ডায়লগ। দেখা যায় অনেক নার্স স্টোরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা-চাদর রেখে দিয়েছে।

পঙ্গু হাসপাতালের পদ্ধতিগত সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে কিছু লোক আছেন তারা সর্বদা সরকারি দল করে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের ছত্রছায়ায় চলে যায়। রোগীদের থেকে নানাভাবে বখশিশের নামে টাকা আদায় করে। এদের কোনো দল নাই। এরা সব সময় সাধারণ মানুষের মাথায় বাড়ি দিয়ে টাকা আদায় করে। কথায় কথায় মন্ত্রী-নেতাদের দোহাই দেয়।

অনেক সময় মান সম্মানের ভয়ে অনেক কিছু বলতে পারি নাতবে সরকারের উচিত পঙ্গু হাসপাতালের এই সব দালালদের ধরে বিচার করাএতে করে রোগী হয়রানি কমে যাবে

বাংলানিউজ: বাংলানিউজকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ড. শাহ আলম: বাংলানিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ।

দুর্ঘটনায় ইয়াং বাইকারদের পা কেটে ফেলায় কান্না পায়

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।